বাস্তবে নয় গল্প হয়েই থাকবে কাতারের ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’

বড় কোন আসরের জন্য নতুন করে স্টেডিয়াম তৈরি করার রেওয়াজ বেশ পুরনো। কাতার বিশ্বকাপে তেমনি এক স্টেডিয়াম করা হয়েছে। যা ১৮ ডিসেম্বরের পর আর থাকছে না। সে সময় বাস্তবে নয়, কল্পনা আর গল্প হয়েই থাকবে এই স্টেডিয়াম। সেই হিসেবে বলা যায়, যাত্রা তবে ফুরোল! 

ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের পর ‘৯৭৪’ স্টেডিয়ামের দিকে তাকিয়ে হয়তো অনেকেরই দীর্ঘশ্বাস পড়েছে এই কথা ভাবতে ভাবতে। কেউ কেউ ছবিও তুলে রেখেছেন স্টেডিয়ামের। কারণ কয়েক সপ্তাহ পর মানচিত্রে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত এই স্টেডিয়ামকে। বিশ্বকাপের ৭ ম্যাচের জন্য তৈরি করা হয়েছিল স্টেডিয়াম ‘৯৭৪’। কাতারের ডায়াল কোড আর নির্মাণ শৈলীর কারণে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ফুটবল বিশ্বে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল ৪০ হাজার আসনের এই স্টেডিয়াম। সবার নজরও কেড়েছিল।

বিশেষ করে পরিত্যক্ত ৯৭৪ কন্টেইনার দিয়ে তৈরি এই স্টেডিয়াম মুগ্ধতা ছড়িয়েছে দর্শনার্থীদের মাঝে। ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের পর ফুরিয়েছে এই স্টেডিয়ামের চাহিদা। শুরু হয়েছে দ্রুত খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড়। বিশ্বের প্রথম বহনযোগ্য স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ কী সেটা এখন পর্যন্ত ঠিক করেনি কাতার প্রশাসন। স্টেডিয়াম খুলে ফেলার পর সেটি কী বিক্রি করা হবে নাকি অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে দেশটির সরকার। শোনা যাচ্ছে, এই স্টেডিয়ামের অংশ বিশেষ দিয়ে ছোট ছোট আরো কয়েকটি মাঠ তৈরি করতে পারে কাতার। এই মাঠের সংস্থাপন খরচ ছিল অন্য যেকোনো মাঠের চেয়ে তুলনামূলক বেশ কম।

জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও রাশিয়া বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম তৈরির পর অনেক মাঠই পরে কোনো কাজে আসেনি। কাতারের ৮ স্টেডিয়ামের মধ্যে স্টেডিয়াম ‘৯৭৪’ ছিল ব্যতিক্রম কারণ একমাত্র এই মাঠেই ব্যবহার করা হয়নি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যে কারণে এই মাঠের সবগুলো ম্যাচই হয়েছে সন্ধ্যার পর। ৭ ম্যাচে এই মাঠে গোল হয়েছে ২১টি। একমাত্র লিওনেল মেসি ছাড়া ফুটবল বিশ্বের তিন বড় তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার জুনিয়ররা এই মাঠে গোল পেয়েছেন। স্টেডিয়াম ‘৯৭৪’ আরেকটি কারণেও আলোচিত। স্থায়ী যেকোনো স্টেডিয়াম থেকে বহনযোগ্য এই স্টেডিয়ামের কার্বন নিঃসরণ অনেক কম। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘কার্বন মার্কেট’ বলছে, ৭ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে একে পুনঃস্থাপন করা হলে স্টেডিয়াম ‘৯৭৪’ হবে বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী স্টেডিয়াম।

কাতার বিশ্বকাপ যেন এক অনেক চমকের বিশ্বকাপ। মাঠ আর মাঠের বাইরের অনেক ইস্যুতেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। সে রকমই আলোচিত এক স্টেডিয়াম কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪। কনটেইনার ব্যবহার করে তৈরি এই স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণ অপসারণযোগ্য করেই তৈরি করা হয়েছিল। পরিকল্পনাও ছিল বিশ্বকাপ শেষেই নান্দনিক এই স্টেডিয়ামটি অপসারণ করা হবে। গত সোমবার শেষ ষোলোর ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচটিই ছিল কাতার বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ শেষ ম্যাচ। পরিকল্পনামাফিক তাই এই স্টেডিয়ামটি এখন ভেঙে ফেলা হবে। স্টেডিয়ামটির নামকরণ ৯৭৪ করার পেছনেও রয়েছে এক গল্প। কাতারের ফোন কলের ডায়ালিং কোড নম্বর হচ্ছে নাইন সেভেন ফোর ৯৭৪। তাই স্টেডিয়ামটি তৈরিতেও ৯৭৪টি কনটেইনার ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই কারণেই এর নামকরণ করা হয় ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’।

স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ কাতার বিশ্বকাপের মোট সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল ৪০ হাজার। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই প্রথম অস্থায়ী স্টেডিয়াম। কাতারের সামুদ্রিক এলাকার পাশেই অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে মডিউলার স্টিল ও শিপিং কনটেইনার দিয়ে। স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলার সময় যাতে শব্দদূষণ না হয় সেজন্যও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে কাতার প্রশাসনের। স্টেডিয়ামটি অপসারণের পর এতে ব্যবহৃত উপকরণগুলো যেমন পুনরায় ব্যবহার করা যাবে, তেমনি চাইলে খুব সহজেই এই স্টেডিয়াম অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরও করা সম্ভব। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশে আনতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে)। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে কাতার দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হবে। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি কাতার।

বিশ্বকাপের স্মৃতিমাখা এই স্টেডিয়ামটি ভবিষ্যতে কনটেইনার আকারে সাগরে ভেসে বেড়াবে, নাকি পুনরায় স্থাপন করা হবে অন্য কোনো দেশে, সেটি জানতে দর্শকদের অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে। ফিফার ২২তম আসরের জন্য আটটি ভেন্যু তৈরি করেছে কাতার। এর মধ্যে অন্যতম ‘স্টেডিয়াম-৯৭৪’। ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচসহ মোট সাতটি খেলা হয় এই স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামটিতে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ অনেক দলই খেলেছে। এবার জেনে নেই অদৃশ্য হওয়ার কারণ। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই প্রথম অস্থায়ী স্টেডিয়াম।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //