ইউরো-লাতিন যুদ্ধে এবার জয় কার?

৩২ দলের বিশ্বকাপের লড়াই এখন ৮ দলের। ১৮ ডিসেম্বর সেটি নেমে আসবে দুইয়ে। বিশ্বকাপের চিরকালীন দ্বৈরথ ইউরোপ-ল্যাটিন লড়াই।

আজ শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) কোয়াটার ফাইনালের দুই ম্যাচেই সেই লড়াই আবার দেখার সুযোগ মিলবে। প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া আর দ্বিতীয়টিতে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে নেদারল্যান্ড। 

কাতার বিশ্বকাপের দিন ফুরিয়ে আসছে। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিদ্বন্ধিতার আমেজ। এরই মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালের ৮ দল চূড়ান্ত হয়েছে। যেখানে এশিয়ার কোনো দল নেই। অথচ কাতার বিশ্বকাপ দারুণভাবে শুরু করেছিল এশিয়ার দলগুলো। 

প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সবাই বিদায় নিয়েছে। নামে মাত্র টিকে আছে আফ্রিকা। এ মহাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি মরক্কো। বাকিরা সবাই হয় ইউরোপ না হয় লাতিন আমেরিকার। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ৮ দল নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, মরক্কো ও পর্তুগাল।

প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানকে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে ব্রাজিল হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। অথচ এশিয়ার দুটি দলই দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে উঠেছিল প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে। জাপান গ্রুপ পর্বে ম্যাচে হারিয়েছিল স্পেন এবং জার্মানিকে। কাতার বিশ্বকাপের ফেভারিট বিবেচিত হওয়া দল দুটিও বিদায় নিয়েছে। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়া হারিয়েছিল পর্তুগালকে, যারা মঙ্গলবার ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয় সুইজারল্যান্ডকে। 

প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া সৌদি আরব গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারেনি। ইরানও হারিয়েছিল ইউরোপের ওয়েলসকে; কিন্তু সে পর্যন্তই। এখন এশিয়ার বিশ্বকাপে নেই এশিয়ার কোনো দল। 

লড়াই কেবল ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার মধ্যে। বরাবর এমনই হয়। বিশ্ব ফুটবলের শক্তির ভরকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করে এ দুই মহাদেশ। ক্রোয়েশিয়া ও ব্রাজিল ম্যাচটি কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে এক দল ইউরোপ আর অন্য দল লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করবে।

মধ্যরাতে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। অন্যদিকে আমেরিকাকে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে হবে মেসিদের ম্যাচ। মরক্কো ও পর্তুগাল মুখোমুখি হবে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়েছে মরক্কো। অন্যদিকে পর্তুগাল হারিয়েছে সুইজারল্যান্ডকে।

আগামীকাল শনিবার (১০ ডিসেম্বর) কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে খেলবেন রোনালদোরা। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। সেদিনই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মুখোমুখি হবে চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড হারিয়েছে সেনেগালকে।

অন্যদিকে পোল্যান্ডকে হারিয়েছে ফ্রান্স। আগামী শনিবার কাতারের আল বায়েত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে রাত ১টায়। এশিয়ার কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী মানুষ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো উপভোগ করবে, যেখানে এশিয়ার কোনো দল খেলবে না।

একটি বিশ্বকাপই মূর্তিমান ব্যতিক্রম। বাকি সাত বিশ্বকাপে গড়ে ওঠা ধারা আমেরিকার মাটির জন্য ছিল অহংকার। কী দক্ষিণ আমেরিকা, কী উত্তর আমেরিকা, ইউরোপিয়ানদের কাছে কখনো পদানত হয়নি এর আগে। স্বীকার করেনি বশ্যতা।

অতিথির গলায় দেয়নি মালা। সেই অহংকার চূর্ণ হলো ২০১৪ বিশ্বকাপে। ব্রাজিলে এসে বিশ্বকাপ জিতে গেল জার্মানি। যদিও আর্জেন্টিনার হাতে জ্বলতে থাকা লাতিন প্রতিরোধের শেষ শিখাটির মৃত্যু তুঙ্গস্পর্শী লড়াইয়ের প্রান্তসীমায়। সেমিফাইনালে জার্মানির হাতে নেইমারদের অপমানের বদলা অল্পের জন্য নিতে ব্যর্থ মেসিরা। 

ওই একবারই ইউরোপীয় ফুটবল শক্তির জয়োৎসব দেখেছে আমেরিকা। বাকি ইতিহাস লাতিনের বিজয়-গাথার। তিন শিরোপাজয়ী ব্রাজিলের। দুই শিরোপাজয়ী উরুগুয়ের। দুই শিরোপাজয়ী আর্জেন্টিনার। ঠিক এই জায়গাটায় এসে আমেরিকার সঙ্গে মিশে যায় ইউরোপ।

১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপ বাদ দিলে লাতিন শক্তি ইউরোপে মাথা কুটেছে বাকি ১০ বার। যেখানে ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মাথায় উঠেছে রাজমুকুট। কখনো ব্রাজিল, কখনো আর্জেন্টিনা বা উরুগুয়ে এসেছে রাজ্যজয়ের নেশায়। সেসব অভিযান ব্যর্থ নিদারুণ হতাশায়। এগারো আর আট মিলিয়ে বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানভিত্তিক যে অনুসিদ্ধান্ত দেয়, তাহলো ইউরোপীয় শক্তিগুলোর পক্ষে আমেরিকা জয় দুরূহ।

ইউরোপের ভূমিও লাতিন দলগুলোর জন্য কঠিন ঠাঁই। হয়তো বিশ্ব ফুটবলের দুটি ধারার স্বকীয়তারই স্বীকৃতি এই পরিসংখ্যান। কিংবা নিছকই ঘটনাচক্র। তা না হলে আমেরিকা-ইউরোপের বাইরের দুটি বিশ্বকাপকে কীভাবে মেলাবেন? 

এশিয়া প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করে ২০০২ সালে। কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্ট জয়ের মালা দেয় ব্রাজিলকে। আফ্রিকা প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক ২০১০ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই বিশ্বকাপ ইউরোপেরই সাফল্য-স্মারক। সর্ব ইউরোপীয় ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ স্পেনের।

বিশ্বকাপের ক্যারাভান আবার এসেছে এশিয়ায়। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম। আমেরিকা-ইউরোপের বাইরে তৃতীয়বারের আয়োজনে এগিয়ে যাওয়ার পালা কার? লাতিন আমেরিকার? ইউরোপের? ঘটতে পারে যেকোনো কিছুই।

ক্রীড়া বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সোনালি ট্রফিটি উঠতে পারে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার হাতে। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল কিংবা বেলজিয়ামও সেটি জিততে পারে। আসলে ‘দেবে আর নেবে মেলাবে মিলিবে’র যে ঐক্যতান বেজে চলেছে আধুনিক ফুটবলের বিশ্বমেলায়, সেখানে স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য আর অবশিষ্ট নেই।

ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার ছন্দোবদ্ধ ফুটবল একাকার ইউরোপের পাওয়ার ফুটবলের সাথে। ইউরোপের শক্তিনির্ভর ফুটবলে ঢুকে পড়েছে লাতিন ছন্দ। এ আসলে বিনিময় প্রথারই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। নেইমারের পাশে খেলতে খেলতে স্বরলিপি তোলার মতো এমবাপ্পেও তার পায়ে তুলে নিয়েছেন কিছু লাতিন কারুকাজ।

আবার ইউরোপের পাওয়ার আর প্রেসিং ফুটবলটা খুব করে চেনা হয়ে গেছে মেসির। মেসির যে বেড়ে ওঠাই ইউরোপীয় ফুটবল বৃত্তে। রিয়াল মাদ্রিদে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাথে বামপ্রান্তিক একটি জুটি গড়ে উঠেছিল ব্রাজিলিয়ান ফুলব্যাক মার্সেলোর। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল এখন প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বমেলা।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                   

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //