‘আগ্রাসী মেসি’তে ম্যারাডোনাকে খুঁজছেন ভক্তরা!

একজন সাদাসিধে আর নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে লিওনেল মেসির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। খুব কমই মেজাজ হারাতে দেখাতে যায় তাকে। সেখানে পুরোপুরিই বিপরীত কিংবদন্তী ডিয়াগো ম্যারাডোনা থেকে। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে সেই মেসির অন্য রুপও দেখেছেন ফুটবল প্রিয়রা।

দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে এলএম টেনকে ক’বার মেজাজ হারাতে দেখেছেন? খুব বেশিবার অবশ্যই না। খুব বাজেভাবে ট্যাকলের শিকার হবার পরও হাসিমুখেই সেই প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছেন ফুটবল জাদুকর। তবে এবারের কাতার বিশ্বকাপ যেন ভিন্ন চেহারার এক মেসিকেই দেখল বিশ্ব। ঘটনাটি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শেষ আটের ম্যাচে। টাইব্রেকারে গোল করেন ভিন্নধর্মী উদযাপন, ম্যাচশেষে তেড়ে যান প্রতিপক্ষ ডাগআউটে। কেউ কেউ আগ্রাসী মেসির সমালোচনায় মাতলেও ১৯৭৮ এর বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার ওসভালদো আর্দিলেসের মনে ধরেছে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের নতুন রূপ। মেসির ভেতর তিনি দেখছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার ছাপও।

এখানে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের আগে। সংবাদ সম্মেলনে ডাচ কোচ লুইস ফন হাল দাবি করেছিলেন, যখন আর্জেন্টিনার পায়ে বল থাকে না, তখন মেসি দলকে সাহায্য করতে পারেন না। এমন বক্তব্যকে সহজভাবে নেননি রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় লুসাইল স্টেডিয়ামে তার ‘যুদ্ধংদেহী’ আচরণে। শান্ত স্বভাবের মেসি হয়ে পড়েন রীতিমতো খ্যাপাটে। অন্য কারো ভালো না লাগলেও আর্জেন্টিনার মানুষ ‘নতুন মেসিকে’ আরও বেশি ভালোবাসছে বলে মন্তব্য করেন আর্দিলিস। ম্যাচের তিনদিন পর ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক কলামে ম্যারাডোনার এই সতীর্থ বলেছেন, ‘আমি জানি ইংল্যান্ডে কিছু মানুষ নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পর তার আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া, লুইস ফন হাল ও কয়েকজন ডাচ খেলোয়াড়ের সাথে মুখোমুখি হওয়া দেখে অবাক হয়েছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার অনেক মানুষই মেসির এই নতুন রূপ পছন্দ করেছে। এটা তার জন্য স্বাভাবিক ছিল না।

এটা অনেকটা ম্যারাডোনার প্রতিক্রিয়ার মতো ছিল, যার অর্থ হলো মানুষ তাকে (মেসিকে) আরও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। মানুষ আগ্রাসী নেতা পছন্দ করে বলেও মত দেন আর্দিলেস, ডিয়াগো অনেক জোর খাটাতো, মনোমুগ্ধকর ছিল ও কখনও কখনও আগ্রাসী। মেসি বলতে গেলে প্রায় ভীতু স্বভাবের ছিল এবং বেশি কথা বলত না। মানুষ সবসময়ই ম্যারাডোনার মতো একজন নেতাকে খুঁজে এবং মেসি সেই মানুষটা ছিল না। 

প্রতিক্রিয়া ও আবেগ প্রদর্শন লাতিন অঞ্চলের মানুষদের স্বভাবজাত বলেও জানান ৭০ বছর বয়সী সাবেক মিডফিল্ডার, তাকে নিয়ে পুরনো ধারণা ছিল সে ঠান্ডা মেজাজের ও তার জোরালো আবেগ নেই। এখন তারা আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির জেতার ইচ্ছা অনুভব করতে পারছে। আমরা লাতিন অঞ্চলের মানুষ। আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই ও আবেগ প্রদর্শন করি। হয়ত কখনও কখনও আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলি।

তবে ম্যারাডোনার মতো সবসময় আগ্রাসী না হলেও বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তির সাথে মেসির অনেক মিল দেখেন আর্দিলেস, মেসি সবসময়ই দিয়েগো ম্যারাডোনার ছায়া হয়ে থেকেছে, যিনি ১৯৮৬ সালে আমাদের শেষ বিশ্বকাপজয়ী দলের নেতা ছিলেন। মেসি কখনই ম্যারাডোনার সাথে তার মিলগুলোকে অস্বীকার করতে পারেনি। তারা দুজনেই দশ নম্বর জার্সি পড়ে, দুজনেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। দুজনেই বাঁ পায়ের ফুটবলার এবং জাদুকরী, অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম। 

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকার মেসির প্রতি মুগ্ধতা দুই দশকের পুরোনো, আমি মেসিকে যেদিন প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকেই তার প্রতি আমার মুগ্ধতা। হ্যাঁ, ২০ বছর তো হয়েই গেল। প্রথম দিন থেকেই তাকে বিশেষ কিছু মনে হতো আমার। আমি মনে করি, মেসিকে যে পছন্দ করে না, সে আসলে ফুটবলই বোঝে না।

এদিকে আর্দিলেসের সাথে সুর মিলিয়েছেন আর্জেন্টিনা দলে মেসির সাবেক সতীর্থ পাবলো জাবালেতাও। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিতে লেখা কলামে তিনি বলেছেন, ম্যাচশেষে মেসির প্রতিক্রিয়াও আমার ভালো লেগেছে। তার উদযাপন ও ভন হালের কাছে গিয়ে সে যা বলেছে সেগুলো। একজন রাগান্বিত মেসিকে দেখতেই আমরা ভালোবাসি। এটা আমাকে দিয়েগো ম্যারাডোনার কিছুটা মনে করিয়ে দিয়েছিল, সেরকমই চরিত্র ছিলেন তিনি। যখন আপনি বিশ্বকাপ জেতার চেষ্টা করছেন এটা কোনো খারাপ কিছু নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //