সেরা খেলোয়াড়রাই দলকে ডোবান!

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল। কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ড। ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়ে ফ্রান্স। গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া ইংল্যান্ড একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ফরাসি রক্ষণ সীমানায়। এসেও গেল গোল পরিশোধের সুবর্ণ সুযোগ।

পেনাল্টি পেয়ে গেল ইংল্যান্ড। কিন্তু বিধিবাম। পেনাল্টি শট আকাশে তুলে দিলেন হ্যারি কেন। তাতে ইংল্যান্ডের আর ম্যাচে ফেরা হলো না।

অথচ ইংল্যান্ডের বর্তমান স্কোয়াডে হ্যারি কেন শুধু অধিনায়ক নন। দলের সেরা তারকা। ফ্রান্সের বিপক্ষেই পেনাল্টিতে প্রথম গোল করে ছুঁয়েছেন ওয়েন রুনিকে। দুজনেই ৫৩ গোল করে ইংল্যান্ডের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আসরে জিতেছিলেন সেরা গোলদাতার ‘গোল্ডেন বুট’।

গত বিশ্বকাপে দলকে তুলে এনেছিলেন সেমিফাইনালে। সর্বশেষ ইউরো আসরে ফাইনালে উঠেছিলেন। তার কাঁধে চড়েই ইংল্যান্ড দেখেছিল ১৯৬৬ সালের পর দ্বিতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্ন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় পেনাল্টি সুযোগ নষ্ট করে তিনিই হয়েছেন ইংল্যান্ডের বিদায়ের কারণ।

ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়দের জন্য এমন ট্র্যাজেডি নতুন কিছু না। বরং অবাক করা ব্যাপার, প্রয়োজনের মুহূর্তে দলের সেরা খেলোয়াড়রাই দলকে ডুবিয়েছেন বেশি। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের শুরুতে ম্যারাডোনার চেয়েও বড় তারকা ছিলেন জিকো আর মিশেল প্লাতিনি। তারা বিশ্বকাপ জিতলে হয়তো ইতিহাস অন্যরকম হতো। কোয়ার্টার ফাইনালে দুই দলের মুখোমুখি লড়াই শেষ হয় ১-১ গোলে। অথচ ম্যাচটি ব্রাজিল জিততে পারত আগেই।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ব্রাজিল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় জিকো পেনাল্টি মিস করেন। পরে টাইব্রেকারে পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি প্লাতিনি আর সক্রেটিস। যারা ফুটবলের দুই দিকপাল।

১৯৯০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা আর যুগোস্লাভিয়ার ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। সেখানে পেনাল্টি মিস করেন ম্যারাডোনা। যুগো¯øাভিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ড্রাগন স্টয়কোভিচ।

২০০৬ সালের বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিরুদ্ধে পেনাল্টি নষ্ট করেন ইংরেজ তারকা ফুটবলার ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। একই আসরের ফাইনালে টাইব্রেকারে গোল করতে ব্যর্থ হন ফরাসি ফুটবলার ডেভিড ত্রেজেগুয়েট। তার সেই মিসেই বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ পেয়েছিল ইতালি।

চলতি বিশ্বকাপেও লিওনেল মেসি আর রবার্ট লেভান্ডস্কির মতো মহাতারকা পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেনি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ঐ দুই পেনাল্টি মিসে আর্জেন্টিনা আর পোল্যান্ডের বড় কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি মেসি। আবার এই মেসিই কোপা আমেরিকার মতো বড় আসরের ফাইনালে টাইব্রেকার মিস করে দলকে ডুবিয়েছেন অতীতে ।

২০১০ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি মিস করেন আসামোয়া গিয়ান। অথচ তিনি আবেদি পেলের পর তাকেই ধরা হয় ঘানার ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। কিন্তু গিয়ান পারেননি ১-১ গোলে সমতায় থাকাবস্থায় পেনাল্টি থেকে গোল করতে।

সেই গোল হয়ে গেলে ঘানা নির্ধারিত সময়েই ম্যাচ জিতে যায়। কিন্তু গিয়ানের ব্যর্থতায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর হেরে যায় ঘানা।

ফুটবল ইতিহাসে পেনাল্টি মিসে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডির নাম বুঝি রবার্তো ব্যাজিও। যিনি শুধু ইতালি নয়, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্লে-মেকার। সেই ব্যাজিও ১৯৯০ সালের ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে টাইব্রেকারে বল আকাশে মারেন।

কাপ তুলে দেন ব্রাজিলের হাতে। অথচ সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে তিনি হতে পারতেন ইতিহাসের মহানায়ক। কিন্তু তা তিনি পারেননি। তাই রয়ে গেলেন খলনায়ক হয়ে। ঠিক যেমন হয়েছেন হ্যারি কেন। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড হয়েও প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি তিনি। বরং হয়েছেন বিদায়ের কারণ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //