পেলে থেকে এনজো ফার্নান্ডেজ

ফুটবলের রাজা হিসেবে পরিচিত পেলে অনেক অর্জনে নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছেন। যার মধ্যে অভিষেক বিশ্বকাপেই জিতেছিলেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এরপর থেকে যখনি এই পুরস্কার কেউ পান তখনি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তীর নামটা উঠে আসে।

১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন পেলে। সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিকের পর ফাইনালে জোড়া গোল। পেলের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার শুরুটা ১৯৫৪ সালে, সেবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার চালু করেছিল ফিফা। ১৯৫৪ থেকে ২০২২, ১৭টা বিশ্বকাপের ১৭ জন পেয়েছেন এই পুরস্কার। সবশেষ কাতার বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা পেয়েছেন আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ।

দারুণ খেলে তার সামনে পেলের মতো উদাহরণ যেমন আছে, তেমনি আছে আরও অনেক নাম যাদের ওপর অনেক প্রত্যাশা থাকলেও ফুল হয়ে ফুটতে পারেননি। এনজো বিশ্বকাপের শিরোপা পেয়ে গেছেন অভিষেক আসরেই, তাই আগামীতে তাকে ঘিরে প্রত্যাশাও থাকবে বেশি। ২১ বছর বয়সী এনজো সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন বেনফিকাতে। বিশ্বকাপে গোল করেছেন ১টি, মেক্সিকোর হয়ে।

তবুও এনজো কেন পুরস্কারটা পেয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, প্রথম যে দুটো ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন দুটো ম্যাচেই তার নামার আগে ও পরে দলের শরীরী ভাষা আর খেলার ধরনই বদলে গিয়েছিল। আর্জেন্টিনা দলে লিওনেল মেসি থাকার পরও মাঝমাঠে মূল চালিকাশক্তি ছিলেন এনজো। কম বয়সেও চমৎকার পরিণত মাথা, মাঝমাঠের পরিশ্রমী খেলা জানান দেয় দম আছে ফুসফুসেও।

ম্যাচরে পর আক্রমণে বল বাড়িয়েছেন, আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করেছেন শুরুতেই। অস্ট্রেলিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই নকআউট ম্যাচের প্রতিটিতেই ১০০’র বেশি পাস খেলেছেন এনজো। তার খেলার ধরন এরই মধ্যে আকৃষ্ট করেছে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোকে। রিভার প্লেটের যুবদলে খেলে উত্থান এনজোর, এরপর মূল দলে খেলেছেন তিন মৌসুম।

পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা এই জুনেই মাত্র ১০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি দিয়ে দলে নিয়েছিল এনজোকে। ৮ মিলিয়ন নগদ আর বাকি শর্তসাপেক্ষে। সেই এনজোই যে মাস ছয়েকের ভেতর বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয়ে যাবেন, জানলে রিভার প্লেট র্কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দামটা বাড়িয়ে চাইতেন! নিউক্যাসল তারকা ও সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরার টুইট করেছেন, এনজোকে সাদাকালো জার্সিতে দেখতে ভালোই লাগবে! যদিও তার চুক্তি বেনফিকার সাথে, তবে সেটা একটু অন্যরকম। এনজোর অর্থনৈতিক স্বত্বের ৭৫% বেনফিকার হাতে।

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন বেনফিকা চাইলে বিক্রিও করে দিতে পারে তাকে! এরই মধ্যে লিভারপুল নাকি যোগাযোগ করেছে আর বেনফিকা দর হেঁকেছে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড! ডেইলি মেইলের খবর, এনজোর জন্য ১০৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বাই আউট ক্লজ রেখেছে বেনফিকা আর সেটা দিতে লিভারপুলও তৈরি। অর্থাৎ নগদ নারায়ণ ফেললে জানুয়ারিতেই আবার ক্লাব বদলাতে পারবেন এই আর্জেন্টাইন।

নিউক্যাসল কোচ এডি হোয়ে অবশ্য বলছেন, এই সময়ে এনজোর জন্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের দরটা একটু বেশিই হয়ে যায়, ‘আমি জানি তার কথা, আমি জানি সে কেমন খেলে, তবে তার জন্য অঙ্কটা একটু বেশিই মোটা হয়ে যায়।’

এই কোচের মতে, একটা বিশ্বকাপ আসরের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, ‘আমার মনে হয় একটা খেলোয়াড়কে এক বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখেই দলে নিয়ে নেওয়া যায় না। আমরা বলছি না যে আমরা বিশ্বকাপে ভালো করাদের দিকে তাকাব না, তবে সেটাই একমাত্র উপায় নয়।’

এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপের উদীয়মান খেলোয়ার লুকাস পোডলস্কির ক্লাব ক্যারিয়ারটা ভালো যায়নি, মার্ক ওভারমার্সও পারেননি প্রত্যাশা মেটাতে। আবার রাশিয়া বিশ্বকাপের উদীয়মান কিলিয়ান এমবাপ্পে চার বছরে আরও পরিণত। স্বীকৃতিটা পেয়েছেন এনজো ফার্নান্দেজ, পরের কীর্তিটা নিজেকেই করতে হবে। এখন সামনের দিনগুলোতে কিভাবে ক্যারিয়ার পার করেন সেটাই দেখার বিষয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //