বাংলাদেশে ফুটবল এখন ‘মৃতপ্রায়’ খেলায় পরিণত হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও নারী জাগরণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আবার নারীরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ আসরের শিরোপা জিতে। এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিশ্ব নারী ফুটবলে বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিল ১৪০ নম্বরে; যেখানে ভারত ৬১ ও নেপাল ১০৩ নম্বরে। সেখানে বাংলাদেশ দল তাদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল।
বিশ্ব নারী ফুটবলের র্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ১৫৫, মালদ্বীপ ১৫৯, পাকিস্তান ১৬০ ও ভুটান ১৭৭ নম্বরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ফুটবলে সেরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সিনিয়র সাফ নারী ফুটবলের শিরোপা জেতে। সেবার ফাইনালে বাংলাদেশ ৩-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে স্বাগতিক নেপালকে। এবারও সেই নেপালকেই ফাইনালে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ নারী দলটি। পার্থক্য হলো, সিনিয়রদের ফাইনাল ম্যাচ হয়েছিল নেপালে, আর এবারের ফাইনাল হলো বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে নারীরা ফুটবলে প্রবেশ করেছে খুব বেশি সময় হয়নি। পুরুষদের ফুটবল চর্চা স্বাধীনতা লাভের কয়েক মাস পরই শুরু হয়। কিন্তু নানা সামাজিক প্রতিক‚লতার কারণে নারীরা তখনই ফুটবল চর্চা শুরু করতে পারেনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে এই নেপালের সঙ্গেই। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ০-১ গোলে পরাজিত হয়। তবে সেই থেকে মাত্র ১২ বছরের চর্চার পর সাফ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সিনিয়র নারী সাফ ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশ দল নেপালকে পরাজিত করে। এবার অনূর্ধ্ব-২০ সাফের ফাইনালে ব্যবধান প্রায় একই রকম।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারী সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্ট শুরু হয়। চার দলের এ টুর্নামেন্টে প্রথমে লিগপর্বে প্রতিটি দল একবার করে পরস্পরের মোকাবিলা করে। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে ৩-১ গোলে নেপালকে পরাজিত করে, দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে এবং তৃতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দেয়। লিগপর্বের অন্য ম্যাচগুলোতে ভারত ১২-০ গোলে ভুটানকে, নেপাল ৩-১ গোলে ভারতকে এবং নেপাল ৪-০ গোলে ভুটানকে পরাজিত করে। লিগপর্বে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকায় নেপাল ও বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে। ছিটকে পড়ে কথিত আঞ্চলিক সেরা দল ভারত। গত ৯ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। একটি করে গোল করেছেন শাহেদা আক্তার, শামসুন্নাহার ও উন্নতি খাতুন। ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শামসুন্নাহার।
পুরুষ ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। শুধু র্যাংকিং বলে কথা নয়, তারা ফুটবলে কোনো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। বিশ্ব পুরুষ ফুটবল র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২ নম্বরে। যেখানে ভারত রয়েছে ১০৬ নম্বরে। ভারত সাফ ফুটবলে সেরা এবং তারা দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এখন এশিয়ান লেভেলে চলে গেছে। তবে নারী ফুটবল দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সুযোগ পেলে তারা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম। পুরুষদের তুলনায় অনেক দেরিতে চর্চা শুরু, কমলাপুরের সাদামাটা স্টেডিয়ামে মূল অনুশীলন চালানো, দেশি কোচের কাছেই খেলা শেখা, চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে থেকে ফুটবলের সঙ্গে থাকার পরও দেশকে সম্মানিত করল নারীরা। আশা করা যায়, ফুটবলের সেই সোনালি যুগে ফিরে যাবে বাংলাদেশ নারীদের হাত ধরে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh