হুমকির মুখে পিএসজির ‘গ্যালাক্টিকোস’

ফুটবল দুনিয়ায় ‘গ্যালাক্টিকোস’ মানেই রিয়াল মাদ্রিদ। শব্দটির প্রচলন স্প্যানিশ শব্দ ‘গ্যালাক্টিক’ থেকে। ফুটবলের উজ্জ্বলতম তারকাদের সম্মিলন ঘটিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ পরিণত হয় গ্যালাক্টিকোসে। বিগত শতাব্দীর মধ্যভাগে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ফেরেংক পুশকাস, জেন্তোদের মতো তারকাদের নিয়ে রিয়াল আবির্ভূত হয়েছিল তারকা-সমৃদ্ধ দলে।

তবে গ্যালাক্টিকোস হিসেবে রিয়ালের প্রকৃত উত্থান গত দুই যুগে। জিনেদিন জিদান, রোনাল্ডো নাজারিও, রবার্তো কার্লোস, ডেভিড বেকহ্যাম, লুইস ফিগোর মতো মহাতারকাদের স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে জড়ো করে তাক লাগিয়ে দেয় রিয়াল। 

যার সুফল রিয়াল পেয়েছে। স্টেফানো যুগে টানা পাঁচটি আর শেষ দুই যুগে সাতটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে রিয়াল মাদ্রিদ প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বের সেরা ক্লাব হিসেবে। রিয়ালের পর অনেকেই ‘গ্যালাক্টিকোস’ গড়ার চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বার্সেলোনা কিংবা ম্যানচেস্টার সিটি চেষ্টা করেছে সেরা ফুটবলারদের দলে ভেড়াতে। তাতে বার্সেলোনা কিছুটা সফল হলেও প্রকৃত ‘গ্যালাক্টিকোস’ হয়ে উঠতে পারেনি। আর ম্যান সিটির চেষ্টা কখনোই সফল হয়নি। 

এদিক থেকে ফ্রান্সের ‘পিএসজি’ বরং চমক দেখিয়েছে। আধুনিক ফুটবলের সেরাদের দলে ভিড়িয়েছে। লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার জুনিয়র, সার্জিও র‍্যামোস, আশরাফ হাকিমি, আনহেল ডি মারিয়াদের একই ছাদের নিচে জড়ো করতে পেরেছিল তারা। কাতারের ধনকুবের নাসের আল খেলাইফি অকাতরে ‘পেট্রোডলার’ উড়িয়েছেন ‘গ্যালাক্টিকোস’ গড়তে। সেটা তিনি পেরেছেনও। অন্তত কাগজে-কলমে পিএসজি এখন ফুটবলে বিশ্বের গ্যালাক্টিকোস। কিন্তু প্রকৃত অর্থে পিএসজি কি সেরাদের সেরা হয়ে উঠতে পেরেছে?  

এক কথায় উত্তর হচ্ছে- না। রিয়াল মাদ্রিদ গ্যালাক্টিকোস বানিয়ে জয় করেছে পুরো বিশ্ব। কিন্তু পিএসজি নিজ দেশের ঘরোয়া ফুটবলের করিডর পেরুতে পারেনি। পারেনি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিততে। ২০১৯-২০ মৌসুমে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বনেদি আসরটির ফাইনালে খেলাই প্যারিসের ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তাই সেরা তারকাদের নিয়ে আলোচিত পিএসজি কখনো ক্লাব হিসেবে সেরাদের কাতারে নাম লেখাতে পারেনি। বরং তাদের ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে উপহাস করা শুরু হয়েছে!

বিষয়টি ভালো লাগছে না খোদ পিএসজি প্রেসিডেন্ট খেলাইফির। যে কারণে আগামীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন গ্যালাক্টিকোস গুঁড়িয়ে দেওয়ার। ইতোমধ্যেই পিএসজির স্পোর্টস ডিরেক্টর লুইস ক্যাম্পোস সেই আভাস দিয়েছেন। চলতি মৌসুম শেষেই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে নেইমার জুনিয়র আর রামোসদের।

ডি মারিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মৌসুমের শুরুতেই। বার্সেলোনা থেকে দুই মৌসুমের জন্য আসা মেসির সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে জুনে। শোনা যাচ্ছে, পিএসজির সঙ্গে মেসির চুক্তি নবায়ন হচ্ছে না। সব মিলিয়ে আগামী মৌসুমে পার্ক ডি প্রিন্সেসে তারার হাট নাও বসতে পারে।

শুধু সাফল্যের অভাবে পিএসজির গ্যালাক্টিকোস ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এমন ভাবনাও ভুল। মহাতারকাদের ব্যক্তিত্বের সংঘাতের কারণও শোনা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা এমবাপ্পে। পিএসজিতেও তিনি সবচেয়ে দামি। তাকে ধরে রাখতে দেওয়া হয়েছে অসীম ক্ষমতা। পিএসজির একাদশ নির্বাচনেও কোচ ক্রিস্টোফ গলতিয়েরের উপর প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। সম্প্রতি এমবাপ্পের সঙ্গে মেসির সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

কাতার বিশ্বকাপে ফাইনালের পর এমবাপ্পেকে নিয়ে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজদের কটাক্ষভরা উদযাপনে সৃষ্টি হয় সমস্যার। যা গড়িয়েছে দুই দেশের ফেডারেশন পর্যন্ত। বিশ্বকাপ জিতে ফেরার পর পিএসজি মেসিকে ‘নাম কা ওয়াস্তে’ অভিনন্দন জানালেও এমবাপ্পে সেখানে ছিলেন না। পিএসজির হয়ে খেলতে নেমে ফ্রান্সের স্টেডিয়ামগুলোয় মেসিকে বিদ্রুপ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মেসি এখন পথ খুঁজছেন পিএসজি ছাড়ার। আর নেইমারের সঙ্গে এমবাপ্পের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য বিষয়।

পিএসজিতে মূল সমস্যা সম্ভবত একজন অভিভাবকের। খেলাইফি তো আর রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ নন, যিনি স্নেহের সঙ্গে প্রয়োজনে কঠোর হয়ে রিয়ালের মহাতারকাদের এক সুতায় গেঁথে রাখতে পেরেছেন। খেলাইফি উদ্ধত খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ফলে সমস্যা প্রকট হচ্ছে। বাড়ছে খেলোয়াড়দের মধ্যে দূরত্ব। সব মিলিয়ে খেলাইফির  সাধের ‘গ্যালাক্টিকোস’ এখন হুমকির মুখে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //