বাফুফের অর্থসংকট না অনিচ্ছা

পুরুষদের ফুটবলে নেই আলোর দিশা। আপাতত নারী ফুটবলের সাফল্য নিয়েই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ২০২২ সালের অক্টোবরে সাফ শিরোপা জিতে পুরো দেশকে গর্বিত করেছেন সাবিনা খাতুনরা।

চলতি বছর নারীদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফেও বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। অতিসম্প্রতি নারীদের অনূর্ধ্ব-১৭ সাফেও শিরোপা প্রত্যাশায় ছিল বাঘিনীরা। যদিও ইউরোপের শক্তিশালী দল রাশিয়ার উপস্থিতিতে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু রাশিয়াকে বাদ দিলে অনূর্ধ্ব-১৭ আসরেও বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সাফ অঞ্চলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নারীদের ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন এখন বিস্তৃত। ফুটবল অনুরাগীরা স্বপ্ন দেখছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ খেলবে নারীদের এশিয়ান পর্যায়ে। অংশ নেবে অলিম্পিকে। লক্ষ্যটা কঠিন, কিন্তু বাংলাদেশের নারীদের সামর্থ্য আছে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলার। সম্প্রতি নিজ দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দল খেলেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে।

নিজেদের থেকে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তানকে হারিয়েছে ৪-০ গোলে। আর ইরানের মেয়েদের কাছে হেরেছে ০-১ গোলে। পুরো ম্যাচে ইরানের সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াই করা বাংলাদেশ একমাত্র গোল হজম করেছে ৮৫ মিনিটে। এই পরাজয়ে কোনো গ্লানি নেই। বরং বেড়েছে সাহস আর আত্মবিশ্বাস। কারণ ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ যেখানে ১৪০, ইরান ৬৮। সেই দলকে রীতিমতো চোখ রাঙিয়েছে গোলাম রাব্বানি ছোটনের শিষ্যরা।

বাংলাদেশের নারী ফুটবল সঠিক পথে আছে। এখন শুধু প্রয়োজন দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফের সহায়তা। অথচ এখানেই ব্যর্থ হচ্ছে বাফুফে। সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দলের খেলার কথা ছিল অলিম্পিক বাছাইয়ে। মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য বাছাইয়ের ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ইরান, মিয়ানমার ও মালদ্বীপ। সাবিনাদের জন্য বাছাই পর্ব হতে পারত বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু হায়, বাফুফে নারী দলকে মিয়ানমার পাঠাচ্ছে না। কারণ বাফুফের নাকি টাকার অভাব! 

আসলেই কি বাফুফের টাকার অভাব? অনেক দিন ধরেই বাফুফে আর্থিক সংকটে ভুগছে, এমনটা শোনাচ্ছেন কর্তারা। অথচ জাতীয় দলের জন্য ফিফা থেকে টাকা পাচ্ছে বাফুফে, তাছাড়া বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও রয়েছে বাফুফের। তারপরও কেন এই অর্থ সংকট এমন প্রশ্ন অনেকেরই। এ নিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছেন, ‘ফিফা জাতীয় দলের জন্য বছরে চার ভাগে টাকা দেয়।

এবার প্রথমভাগে যে রবাদ্দ পেয়েছিলাম, বয়সভিত্তিক দু-তিনটি টুর্নামেন্ট করে তা শেষ হয়ে গেছে। আবার পৃষ্ঠপোষক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকেও আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি।’

তবে বাফুফের এই বক্তব্য মানতে পারছেন না ফুটবল কোচ এবং বাফুফের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য হাসানুজ্জামান খান বাবলু। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিটি ফুটবলকে এগিয়ে নিতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ, মেয়েদের মিয়ানমারে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ।’

বাফুফে চেয়েছিল বাংলাদেশে অলিম্পিক বাছাইয়ের খেলা হোক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এটি মিয়ানমারে করার সিদ্ধান্ত নেয় এএফসি। তাতেই সমস্যায় পড়েছে বাফুফে। সোহাগ বলেছেন, ‘দেশের মাটিতে হলে বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া, কিংবা স্থানীয় যাতায়াত এসব খরচ লাগত না বাফুফের। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, বাছাই পর্বে অংশ নেওয়া কোনো দলেরই কোনো খরচ বহন করবে না স্বাগতিক দেশ। ফলে এই টুর্নামেন্ট শেষ করে আসতে প্রায় এক কোটি টাকার মতো খরচ হবে বাংলাদেশের। সেই টাকা এই মুহূর্তে বাফুফের হাতে নেই।’

কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের পুরুষদের জাতীয় দলকে সৌদি আরবের মদিনা থেকে অনুশীলন করিয়ে এনেছে বাফুফে। তাতে অবশ্য কোনো লাভ হয়নি। নিজ দেশের মাটিতে র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা সিশেলসের (১৯৯) বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছে জামাল ভূঁইয়ারা (বাংলাদেশ ১৯২)। একটি ম্যাচে জয় আর একটি হার নিয়ে সিরিজ শেষ করেছে হ্যাভিয়ের কাবরেরার দল। মূলত আগামী জুনে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য জামাল ভূঁইয়াদের প্রস্তুত করতেই মদিনায় অনুশীলন আর সিশেলসের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে জামাল ভূঁইয়ারা। 

সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের পুরুষ দল শিরোপা জিতেছিল ২০০৩ সালে। ২০০৫ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত পরের আসরে খেলেছিল ফাইনালে। আর সর্বশেষ সেমিফাইনালে খেলেছে ২০০৯ সালে। অথচ মেয়েরা সাফে নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু সেই নারী ফুটবল দলকেই বাফুফে আর্থিক অসচ্ছলতার অজুহাত দেখিয়ে পাঠাচ্ছে না অলিম্পিক বাছাইয়ে। এটা অবশ্যই বাফুফের ব্যর্থতা। অনেকেই নারী ফুটবল দল নিয়ে বাফুফের সদিচ্ছার অভাকেও দুষছেন। 

তারা বলছেন, অলিম্পিকের বাছাই পর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে মেয়েদের খেলতে না পারা কেবল দুঃখজনকই নয়, দেশের ফুটবলের জন্যও বড় ক্ষতি। যেখানে ধুঁকতে থাকা ছেলেদের ফুটবলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলেও আসছে না সাফল্য, সেখানে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও অর্থের অভাব দেখিয়ে বার বার থমকে যাচ্ছে নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রা। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে। 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //