কোন পথে যাচ্ছে দেশের ফুটবল

অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশের ফুটবলে সাফ আসর নিয়ে এসেছিল স্বস্তির হিমেল বাতাস। ১৪ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে সেমিফাইনাল খেলা বাংলাদেশ দেখিয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। কিন্তু মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে সব স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। শুধু জাতীয় দল না, বয়সভিত্তিক দলগুলোর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে অনেকেই দেখতে পাচ্ছেন ‘অশনি সংকেত’। 

সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় দল দুই ম্যাচের সিরিজে মুখোমুখি হয় আফগানিস্তানের। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত দুটি ম্যাচই অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের গোল করতে না পারার চিরকালীন দুর্বলতা ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। দ্বিতীয় ম্যাচে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ ম্যাচ ড্র করে মোরসালিনের গোলে। বাংলাদেশ চরম ব্যর্থ হয়েছে এশিয়ান গেমসেও। চীনের হ্যাংঝুতে ‘এ’ গ্রুপের তিন ম্যাচেই হেরে ফিরেছে শূন্য হাতে। এশিয়ান গেমসে অংশ নেয় অনূর্ধ্ব-২৩ অলিম্পিক দল। সিনিয়র খেলোয়াড় কোটায় দলে সুযোগ পায় তিনজন ফুটবলার। যদিও বাংলাদেশ খেলাতে পেরেছে সুমন রেজা আর মেহেদি মুরাদকে। জামাল ভূঁইয়া আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের ক্লাব সো দা মায়ো হয়ে খেলতে যাওয়ায় ছিলেন না। এছাড়া বসুন্ধরা কিংসের এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ থাকায় মোরসালিন, ইব্রাহিম, মতিন মিয়া আর গোলরক্ষক জিকোকে পাওয়া যায়নি। রহমত মিয়ার অধিনায়কত্বে মিয়ানমার, ভারত আর স্বাগতিক চীনের কাছে হেরে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের মিশন। অথচ ২০১৮ সালের ইন্দোনেশিয়া গেমসে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে। 

সেপ্টেম্বরেই এএফসি এশিয়ান কাপ অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে। থাইল্যান্ডে যুবারা হেরেছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের কাছে। এশিয়ান গেমসের স্কোয়াডে থাকা সাতজন ফুটবলার ছিলেন অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের দলে। ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের কিশোররা হেরেছে ০-২ গোলে। নেপালে অনূর্ধ্ব-১৯ দল অংশ নিচ্ছে যুব সাফ ফুটবলে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ভারত ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ হেরেছে দুর্বল ভুটানের কাছে। তাতে খালি হাতেই আসর থেকে ফিরছে যুবারা। 

বাংলাদেশের জার্সিতে ফুটবলের ব্যর্থতার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ ছিল বসুন্ধরা কিংসের। ঘরোয়া ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। দেশের গণ্ডিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পর বসুন্ধরার কর্তাব্যক্তিরা ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ছাপ রাখার। কিন্তু নক আউট পদ্ধতির প্লে-অফের প্রথম ম্যাচেই বসুন্ধরা ০-২ গোলে হেরেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ এফসির কাছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়া বসুন্ধরার ঠাঁই হয়েছে এএফসি কাপে। এটি এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর। ‘ডি’ গ্রুপে বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ কলকাতা মোহনবাগান, উড়িষ্যা এফসি ও মালদ্বীপের মাজিয়া। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা প্রথম ম্যাচে মাজিয়ার কাছে হেরেছে ১-৩ গোলে। অথচ ২০২১ ও ২০২২ সালেও মাজিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নরা। মাজিয়ার কাছে হারলেও বসুন্ধরার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। গ্রুপ পর্বের খেলা হবে ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ ভিত্তিক । তাই বাকি পাঁচ ম্যাচে বসুন্ধরার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। 

তবে মাজিয়ার বিপক্ষে বসুন্ধরার ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার খোরাক বয়ে এনেছে বৈকি। ১২ অক্টোবর মালে স্টেডিয়ামেই মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের প্রাক-বাছাইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দেশ। ১৭ অক্টোবর মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের হোম ম্যাচ। এই দুই ম্যাচের ফলাফলে নির্ভর করবে কোন দল কোয়ালিফাই করবে এশিয়ার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে। মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হেরে গেলে বাংলাদেশের ফুটবল পুনরায় নিমজ্জিত হবে অন্ধকারে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০১৬ সালে ভুটানের কাছে বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে হেরে। প্রায় দেড় বছর বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। এবার মালদ্বীপের কাছে হারলেও একই পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //