মেসি এখন বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য

ফুটবল ইতিহাসে কখনো যা কল্পনা করেনি কেউ, লিওনেল মেসির জন্য সেটাই বাস্তবতা। ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অরকে পরিণত করেছেন ডাল-ভাতে। জিতে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ব্যালন। ফ্রান্স সাময়িকীর দেওয়া পুরস্কারপ্রাপ্তির সংখ্যায় মেসির ধারেকাছে কেউ নেই। মেসির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পাঁচেই থেমেছেন। কিন্তু বিরামহীন মেসি ছুটছেন।

৩০ অক্টোবর রাতে ঘোষণা করা হয় ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম। প্যারিসের শ্যালে থিয়েটারে মেসির নাম ঘোষণা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। ২০২২ সালে কাতারে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী মেসির হাতেই উঠছে ব্যালন, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না কারও মনেই। যদিও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করা আর্লিং হালান্ড আর ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ মাতানো কিলিয়ান এমবাপ্পে ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, কিন্তু তারা পারেননি মেসিকে ‘টেক্কা’ দিতে।

ব্যালন ফুটবলের সর্বোচ্চ পুরস্কার। জনপ্রিয়তা আর গ্রহণযোগ্যতায় ফিফা বেস্ট অ্যাওয়ার্ডের চেয়েও এগিয়ে। ১৯৫৬ সাল থেকে ফ্রান্স সাময়িকীর ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে ব্যালন। শুরুতে শুধু ইউরোপিয়ান ফুটবলাররা মনোনীত হতেন ব্যালন অ্যাওয়ার্ডে। যে কারণে পেলে আর দিয়াগো ম্যারাডোনার মতো দিগি¦জয়ী ফুটবলাররা কখনো ব্যালন জয়ের স্বাদ পাননি। ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের সকল খেলোয়াড়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ব্যালন। আর ২০০৭ সাল থেকে ব্যালন হয়ে ওঠে সর্বজনীন। ২০১০ সাল থেকে বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ফিফার সঙ্গে ফ্রান্স সাময়িকীর চুক্তিতে একত্রীভূত হয় ব্যালন। ফিফা ব্যালন ডি’অর নামে পুরস্কারটি পরিচিতি পায়। যদিও ফিফার সঙ্গে ব্যালনের অংশীদারত্বের ইতি ঘটে ২০১৫ সালেই। বর্তমানে আলাদাভাবে দেওয়া হচ্ছে ব্যালন আর ফিফা বেস্ট অ্যাওয়ার্ড। ফিফা আর ব্যালনের পথযাত্রা ভিন্ন হয়ে গেলেও মেসি রয়েছেন কক্ষপথেই। চলতি বছরও নিজের করে নিয়েছেন ব্যালন আর ফিফা স্বীকৃতি।

মেসিকে এখন বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য বলাই যায়। ফুটবল ইতিহাসে মেসি যা করেছেন, সেটা কোনো রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে সম্ভব বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। বর্তমানে মেসির বয়স ৩৬ বছর। যে বয়সে বেশিরভাগ ফুটবলার ‘বুটজোড়া’ তুলে রেখে উপভোগ করতে চান অবসর জীবন। নয়তো টিকে থাকেন নিজের ছায়া হয়ে। কিন্তু মেসি তো মেসিই। বুড়ো বয়সে তিনি পূরণ করেন অধরা বিশ্বকাপ স্বপ্ন। মেতে ওঠেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাতারে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপে মেসি জাদুতে বুঁদ হয়েছিল গোটা বিশ্ব। ৩৬ বছর পর দেশকে এনে দিয়েছেন কাক্সিক্ষত শিরোপা। সাত গোল ও তিন অ্যাসিস্ট করে আসরের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল স্কোরার হয়ে সিলভার বুটও জিতেছিলেন। গত মার্চে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ফুটবলারদের পারফর্ম্যান্স। এই সময়ে সাবেক ক্লাব পিএসজির হয়ে ৪১ ম্যাচে ২০ অ্যাসিস্টের সঙ্গে ২১ গোল করেছেন মেসি। তবে কাতার বিশ্বকাপে অতিমানবিক পারফর্ম্যান্সে মেসি ব্যালন জয়ের দৌড়ে পেছনে ফেলেছেন এমবাপ্পে আর হালান্ডকে। এমবাপ্পে কাতার বিশ্বকাপে বিশ্বকাপ জয় বাদে সব করেছেন। পুরো আসরে ৮ গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’ দখলে নিয়েছেন। লিগ ওয়ানে সতীর্থ মেসির চেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০২২-২৩ মৌসুমে পিএসজির জার্সিতে এমবাপ্পের গোলের সংখ্যা ৪৩ ম্যাচে ৪১টি আর অ্যাসিস্ট ১০টি। অন্যদিকে হালান্ড তো কাঁপিয়েছেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল। চার হ্যাটট্রিকসহ ইপিএলে ৩৬ গোল করে গড়েছেন সর্বকালীন রেকর্ড। এছাড়া উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও ছিল সর্বোচ্চ ১২ গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বিগত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে ৫৩ ম্যাচে ৫২ গোল আর ৯ অ্যাসিস্ট নিয়ে অনবদ্য নরওয়ের তরুণ। জিতেছেন ম্যান সিটির হয়ে ট্রেবল। ইপিএলের সেরা খেলোয়াড়, সেরা নবাগত, সেরা গোলদাতা, চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা গোলদাতা, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু আর উয়েফা বেস্ট অ্যাওয়ার্ডের মতো স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু সেটা ব্যালন জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। মূলত ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে নরওয়ের না থাকাই ব্যালনে পিছিয়ে দিয়েছে হালান্ডকে। তবে তাকে বঞ্চিত রাখেনি ফ্রান্স সাময়িকী কর্তৃপক্ষ। তিনি জিতেছেন ব্যালনের সেরা স্ট্রাইকার ‘গাড মুলার’ ট্রফি ।

অষ্টম ব্যালন ডি’অর জিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মেসি বলেন, ‘আমি যে ক্যারিয়ার পেয়েছি সেটা আমি কল্পনাও করিনি। ভাগ্যকে আমার পাশে পেয়েছি, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। আমার সব লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি, ফুটবলে যা কিছু আছে তার সবই অর্জন করতে পেরেছি- যা খুবই কঠিন।’

ব্যালনের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ইয়াসিন ট্রফি জিতেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। একই মঞ্চে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের কোপা ট্রফি জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদের ইংলিশ তারকা বেলিংহাম। স্প্যানিশ বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলার আইতানা বোনামাতির হাতে উঠেছে বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ের পুরস্কার।



সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //