‘ব্যাটল অব আমেরিকাস’ ম্যাচে মাঠ ও গ্যালারির লড়াই

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচকে বলা হয় ‘ব্যাটল অব আমেরিকাস’ কিংবা ‘সুপার ক্ল্যাসিক অব আমেরিকাস’। এই দুই দলের ম্যাচে যেমন মাঠে খেলোয়াড়রা থাকেন উত্তেজিত, তেমন অবস্থা থাকে সমর্থকদের মাঝেও। ফলে প্রায়ই মাঠে বা মাঠের বাইরে ঘটে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বাংলাদেশে যেটা দেখা যেত মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে, এখনো যেটা দেখা যায় ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যকার ২২ নভেম্বর বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইপর্বের ম্যাচে সর্বশেষ দেখা গেল চরম উত্তেজনা, তা একদিকে যেমন ছিল মাঠে, তেমনি ছিল গ্যালারিতে। 

১৯২৫ সালে কোপা আমেরিকা ফাইনালে মারামারির ঘটনায় ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত দু দলের মধ্যে কোনো ফুটবল ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৬ সালে দু দলের ম্যাচে পুনরায় মারামারির ঘটনা ঘটলে পরের ১০ বছর কোনো খেলা হয়নি তাদের মধ্যে। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে আবার দু দলের ম্যাচে বিতর্কিত ঘটনা ঘটে। ছোট ছোট ঘটনা তো ঘটে নিয়মিতই। তার শেষটা এবার দেখল বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল দর্শক। 

বিশ্ব ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচে এমনিতেই উন্মাদনার শেষ নেই। এবার তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। গ্যালারিতে সমর্থকদের মারামারির পর খেলা শুরু হতে বিলম্ব হয় ২৭ মিনিটের মতো। এরপর ম্যাচেও ছিল দুই দলের মারমুখী ভঙ্গি, রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে আর্জেন্টিনা মাঠ ছাড়ে ১-০ গোলের জয় নিয়ে। তবে আলোচনার কেন্দ্রে গ্যালারির সেই ঘটনা। যেখানে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে তদন্তে নামছে ফুটবল বিশ্বের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।

রিও ডি জেনিরোর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামের এই কুরুক্ষেত্রের ঘটনায় দোষী প্রমাণ হলে বড় শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল। এ ক্ষেত্রে জরিমানা কিংবা পয়েন্ট কর্তনের মতো শাস্তিও পেতে পারে দেশটি। এমনিতে এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা তেমন সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। ৬ ম্যাচে মাত্র দুই জয়ে তারা টেবিলের ছয়ে অবস্থান করছে। 

এ ঘটনা সম্পর্কে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘ফুটবল মাঠে বা মাঠের বাইরের এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। খেলোয়াড়, সমর্থক, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত দলগুলো এবং তাদের কর্মকর্তারা একটি নিরাপদ পরিবেশের দাবিদার।’ ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি তদন্তে নামছে। ২০২৩ সালে নতুন করে সংশোধন আনা ফিফার শৃঙ্খলা নীতিমালার ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হোম ক্লাব এবং ফেডারেশন ম্যাচের আগের মুহূর্ত, খেলা চলাকালে ও ম্যাচ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় পরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে যে কোনো ধরনের ঘটনার দায় স্বাগতিক বোর্ডকে নিতে হবে। অর্থাৎ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়ে পুরো দায় নিতে হবে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনকে (সিবিএফ)। সে হিসেবে তাদের কোনো খুঁত থাকলে ব্রাজিলকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। 

গত ২২ নভেম্বর সত্যিই এক অবিশ্বাস্য, অঘটনের দৃশ্য দেখা গেল মারাকানায়। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ শুরুর আগে গ্যালারির দক্ষিণ অংশে দুই দলের সমর্থকরা বিবাদে জড়ান। পরে পুলিশ এসে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, যা থামাতে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দুই দলের খেলোয়াড়রাই গ্যালারির দিকে ছুটে যান। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হন। ম্যাচও শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পর। মজার কথা হলো, ব্রাজিলের পরাজয় যখন নিশ্চিত, তখন ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই তাদের দর্শকরা গ্যালারি ছেড়ে চলে যায়। ফলে পরাজয় ও নিজেদের দর্শকদের দুয়ো ধ্বনি শুনেই মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিল দলকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //