অধিনায়কত্বের অভিষেকেই আফিদার ‘টক-ঝাল-মিষ্টি’ অভিজ্ঞতা

২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে বাংলাদেশ ১২-০ গোলে বিধ্বস্ত করল প্রতিপক্ষকে। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন শাহেদা আক্তার রিপা। স্ট্রাইকার হিসেবে রিপার হ্যাটট্রিক প্রত্যাশিত। টুর্নামেন্টের সেরা গোলদাতাও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে আলোচনার জন্ম দেন আফিদা খন্দকার। কিন্তু কেন আফিদার হ্যাটট্রিক নিয়ে আলোচনা?

আফিদা মূলত রক্ষণভাগের খেলোয়াড়। স্টপার পজিশনে তার কাজ প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়া। কিন্তু সেই আফিদাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করলেন হ্যাটট্রিক। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে করা তার প্রতিটা গোল ছিল চোখ-ধাঁধানো শটে। আসরের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে আফিদারা জিতে নেয় শিরোপা।

২০২৪ সালেও বাংলাদেশ ধরে রেখেছে নারীদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ট্রফি। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে শিরোপার ভাগীদার ভারত। ৮ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর স্টেডিয়ামেই বিতর্কিত ফাইনাল শেষে বাংলাদেশ আর ভারতকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে শেষ হলে ফলাফল নির্ধারণে নিতে হয় টাইব্রেকারের আশ্রয়। কিন্তু সেখানেও ১১টি শটে দুদলের কেউ লক্ষ্যভেদে ভুল করেননি। আন্তর্জাতিক ফুটবলের বর্তমান  নিয়মানুযায়ী, ‘সাডেন ডেথ’ পর্বে ফলাফল না আসা পর্যন্ত চলবে পেনাল্টি শুট-আউট। কিন্তু নিয়ম না মেনে শ্রীলঙ্কান ম্যাচ কমিশনার ডিলন ডি সিলভা জয়াসুরিয়া নেন ‘টস’ করার অভাবিত সিদ্ধান্ত। টস-ভাগ্য যায় ভারতের পক্ষে। ভারতের মেয়েরা ফেটে পড়ে শিরোপা জয়ের উল্লাসে।

ভারতীয়দের উল্লাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ‘বাই-লজ’ উপেক্ষা করে ম্যাচ রেফারির টস ছুড়ে শিরোপা নির্ধারণ মেনে নেয়নি বাংলাদেশ। খেলোয়াড় আর কোচিং স্টাফদের তীব্র প্রতিবাদে ঝুলে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক। ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন রেফারি অ্যাসেসর তৈয়ব হাসান সামসুজ্জামান থেকে শুরু করে সাফের কর্তারা। এক সময় ‘বাই-লজ’ অনুযায়ী ম্যাচ রেফারি রাই অঞ্জনার পুনরায় টাইব্রেকার শুরু করার আহ্বানে ভারত সাড়া না দিয়ে মাঠ থেকে প্রস্থান করে। কয়েক ঘণ্টার  নাটক আর বহু দেন-দরবারের পর দুই দলকে ‘যৌথ চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আয়োজকরা।

বাংলাদেশের হয়ে ‘টস’ নামের লটারিতে অংশ নিয়েছিলেন আফিদা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক যে তিনি-ই।  অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই অর্জন করলেন ‘টক-ঝাল-মিষ্টি’ অভিজ্ঞতা। টস হেরে তিক্ততার সঙ্গে তিনি দেখেছেন প্রতিপক্ষের উল্লাস। কিছু সময় পরেই তীব্র ঝাঁজে পুরো দল নিয়ে অংশ নিয়েছেন প্রতিবাদে। অভিজ্ঞতার শেষ হয়েছে শিরোপা ভাগাভাগির পর মিষ্টি হাসিতে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আফিদা কেন অংশ নিলেন টসে? বাংলাদেশ দলের কর্মকর্তারাই কেন বাধা দিলেন না? আফিদা কমবয়সী। আন্তর্জাতিক ম্যাচের নিয়ম-কানুন সব জানার কথা না তার। আফিদাই জানালেন, ম্যাচ রেফারি টস করার সময় ফলাফল নির্ধারণের বিষয়ে জানাননি। কর্মকর্তারাও ভেবেছিলেন, পুনরায় টাইব্রেকার শুরু করার জন্যই ‘টস’ হচ্ছে। কিন্তু টসের পর ম্যাচ কমিশনারের নির্দেশে রেফারির লম্বা বাঁশি আর ভারতের উল্লাসে টনক নড়ে সবার।

যা-ই হোক, দারুণ কিংবা নিদারুণ অভিজ্ঞতার মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ শিরোপা ধরে রাখতে পারায় খুশি আফিদা। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম চ্যালেঞ্জেই দেশকে শিরোপা এনে দেওয়ার চ্যালেঞ্জে জিতেছেন তিনি। এখন তিনি জিততে চান মূল সাফ শিরোপা। হ্যাঁ, আফিদা ইতোমধ্যে সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলে। আফিদার সঙ্গে বয়সভিত্তিক এই দলের স্বপ্না, স্বর্ণা রানী, ইতি খাতুন ও সুরমা জান্নাতও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন। চলতি বছরের অক্টোবরে কোচ সাইফুল বারী টিটুর অধীনে ঘরের মাঠে সাফ শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামবে সাবিনা-সানজিদাদের বাংলাদেশ। আফিদাও অংশ নিতে চান সেই লড়াইয়ে, ‘আমার লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে সাফ শিরোপা জেতা। সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিয়ে সাফ জিততে চাই।’

জাতীয় দলে খেলা ছাড়াও আফিদার মনে জন্ম নিয়েছে নতুন একটি স্বপ্ন। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন মালদ্বীপ আর ভারতের লিগে খেলেছেন। এ ছাড়া সানজিদা খাতুন প্রথম বিদেশি নারী ফুটবলার হিসেবে কলকাতার ইস্ট বেঙ্গলে যোগ দিয়েছেন। গোল করে গড়েছেন ইতিহাস। এ ছাড়া 

কৃষ্ণা রানী সরকারের অভিজ্ঞতা আছে ভারতীয় লিগে খেলার। সিনিয়রদের পথ ধরে আফিদাও খেলতে চান দেশের বাইরের কোনো ক্লাবে। জানালেন, ‘ইচ্ছে আছে, দেশের বাইরের লিগে খেলার। যদি সুযোগ পাই, অবশ্যই খেলব। সাবিনা আপু, সানজিদা আপুরা এখন কলকাতায় খেলছেন, তাদের মতো বাইরেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //