হামজা হতে পারেন লাল-সবুজের আইকন

একটা সময় মোহামেডান কিংবা আবাহনীতে খেলা ফুটবলারদের নাম এক নিশ্বাসে বলে দিতে পারতেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। অথচ বর্তমানে জাতীয় দলে খেলা অধিকাংশ ফুটবলারের নামও মানুষের অজানা। কিন্তু কেন? 

বিগত এক দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের ফুটবলের মান ছিল ক্রমশ নিম্নমুখী। আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার রেশে ঘরোয়া ফুটবল হারিয়েছে দর্শক। তৈরি হয়নি বড় কোনো তারকা ফুটবলার। অথচ অতীতে সালাউদ্দিন, চুন্নু, কায়সার, মুন্না, সাব্বিরদের খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়ামে নিয়মিত হাজিরা দিয়েছে অগণিত দর্শক। যা ছিল দেশের ফুটবলের সোনালি সময়। আসলে যে কোনো খেলার জৌলুস নির্ভর করে তারকা খেলোয়াড়দের উপস্থিতির ওপর। জাতীয় দল কিংবা ক্লাব মহিমান্বিত হয়ে ওঠে মহাতারকাদের নামে। এখনো হাঙ্গেরি ফুটবল দলকে সবাই মনে রেখেছে ফেরেংক পুশকাসের জন্য। পেলের কল্যাণে মার্কিন ক্লাব কসমসের নাম সবার কমবেশি জানা। ইন্টার মিয়ামি কিংবা সৌদি আরবের আল নাসরকেই বিশ্বের কজন মানুষ চিনত? শুধু লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উপস্থিতিতে রাতারাতি বদলে গেছে পরিস্থিতি। দুই মহাতারকায় আলোকিত ইন্টার মিয়ামি আর আল নাসরের খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়াম তো বটেই, ছোটপর্দায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কোটি কোটি ভক্ত। 

বাংলাদেশের ফুটবলকে জাগাতেও একজন ‘আইকন’ খেলোয়াড় বড্ড প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে হ্যাভিয়ের কাবরেরার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ঘুরে দাঁড়াবার ইঙ্গিত দিয়েছে। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া নিজেকে দেশের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অবশ্য ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন তারকা হিসেবেই। ক্যারিয়ারের শুরুতে ডেনমার্কের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব হেলেরাপ এবং কোপেনহেগেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখ জামাল ধানমন্ডি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব হয়ে বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় ঢাকা আবাহনীতে নাম লিখিয়েছেন জামাল। অভিজ্ঞতা রয়েছে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলার। সম্প্রতি খেলে এসেছেন আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের ক্লাব সোল দা মায়োতেও। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে ধরা হয় বাংলাদেশের অধিনায়ককে। 

ফিনল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি তারিক কাজী, তরুণ শেখ মোরসালিন আর রাকিব হোসেনরা ‘তারকা’ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে তারা দেশের ফুটবলের ‘আইকন’ হয়ে উঠতে পারবেন কিনা বলা মুশকিল। বরং ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি মায়ের সন্তান হামজা দেওয়ান চৌধুরী হতে পারেন বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। 

হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ডের ফুটবলে পরিচিত নাম। খেলেছেন ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলে। নামি ক্লাব লিচেস্টার সিটির হয়ে ২০২১ সালে এফএ কাপ এবং ২০২২ সালে কমিউনিটি শিল্ড জিতেছেন। এখনো ২৬ বছর বয়সী হামজা কাগজে-কলমে লিচেস্টার সিটির ফুটবলার। তবে ফর্মের জটিলতায় হামজাকে ধারে খেলতে দেওয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ওয়াটফোর্ড এফসিতে। 

ক্যারিয়ারের শুরুতে হামজা স্বপ্ন দেখতেন ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলার। যদিও সেই স্বপ্ন পূরণ হবার সম্ভাবনা কম। ইংল্যান্ড বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল। ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপ সেমিতে খেলেছে ইংলিশরা। ২০২১ সালে খেলেছে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে থ্রি-লায়ন্সরা স্বপ্ন দেখছে ২০২৪ সালের ইউরো জয়ের। মূলত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বা রাইট ব্যাক হিসেবে খেলা হামজার জন্য নিকট ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলা কঠিন। যেহেতু একই পজিশনে সাউথগেটের হাতে রয়েছে কাইল ওয়াকার, রিকো রুইস, ডেক্লান রিসে আর ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ডের মতো প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়। তাই হামজা হয়তো নিজেই ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছেন।

সম্প্রতি হামজা বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পক্ষ থেকেও হামজার সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। কোচ কাবরেরা বাংলাদেশ দলে হামজার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। হামজা বাংলাদেশের প্রতি তার আত্মিক টানের কথা নিজেই উল্লেখ করেছেন। নিজেকে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 

হামজাকে সত্যিই বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখা যাবে? সেই উত্তর সময়ে জানা যাবে। তবে হামজার অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের ফুটবল সমৃদ্ধ হবে, এটা সত্যি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজার রয়েছে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার কোনো জাতীয় দলে হামজার মতো ‘হাই প্রোফাইল’ ফুটবলার নেই। হামজাকে পেলে বাংলাদেশ দলের শক্তি তো বাড়বেই, পরিচিতিও বেড়ে যাবে বহুগুণ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ফুটবলকে জাগাতে হামজা হতে পারেন বড় বিজ্ঞাপন। হতে পারেন লাল-সবুজের ‘আইকন’।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //