বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন গত ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাজী সালাহউদ্দিনের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের পর বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এরই মধ্যে নবনির্বাচিত সভাপতির নেতৃত্বে স্ট্যান্ডিং কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। জাতীয় দল আর ফিন্যান্স কমিটির দায়িত্ব নিজের কাছে রেখেছেন তাবিথ।
মাত্র ৪৫ বছর বয়সে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটা চ্যালেঞ্জিং, নিজেই স্বীকার করেছেন তাবিথ। তবে সময়ের চাহিদায় তরুণদের বড় দায়িত্বে আসা উচিত বলেও তিনি মনে করেন। বাফুফে সভাপতি হিসেবে তিনি দেশের ফুটবল কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগে যেতে চান। মেয়েরা সাফ অঞ্চলে নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে। এখন নারী ফুটবলকে এশিয়া পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। ছেলেদের ফুটবলের র্যাংকিং বাড়ানো আর খেলার মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তাবিথ।
বাংলাদেশে পেশাদার লিগ আয়োজন হচ্ছে। কিন্তু ক্লাবগুলো রয়ে গেছে শৌখিন পর্যায়ে। তাবিথ পেশাদার লিগ থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের খেলা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারে আগ্রহী। এতে মিডিয়া রাইটসের মাধ্যমে ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হবে। খেলার দর্শক আর সমর্থক বাড়বে।
তাবিথ মনে করেন, বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলোকে এলাকাভিত্তিক সমর্থক গড়ে তোলার দিকে নজর দেওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে নিজের পরিচালিত ফেনী সকার আর নোফেল স্পোর্টিংয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এই ক্লাব নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় দলের কমিটির প্রধান হিসেবে তাবিথের টার্গেট ২০২৫ সালের ছেলেদে সাফ ফুটবল এবং ২০২৭ সালের এশিয়ান গেমস। যদিও এশিয়ান গেমসে খেলতে বাছাইপর্ব পেরোতে হবে। জাতীয় দলের জন্য নিয়মিত ম্যাচ আয়োজন আর ছেলেমেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টসহ জেলা লিগ নিয়মিত আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন তাবিথ। ফিন্যান্স কমিটির প্রধান হিসেবে তাবিথ ফেডারেশনে সংস্কার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চান।
বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির প্রধান হিসেবে বহাল রয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত মো. ইমরুল হাসান। এ ছাড়া প্রথমবার বাফুফে নির্বাচনে অংশ নিয়েই সর্বোচ্চ ভোটে সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়া মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন।
তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলার তৈরিতে ডেভেলপমেন্ট কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শাহরিয়ার জাহেদী শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা আর পৃষ্ঠপোষক। তার একাডেমি থেকে উঠে আসা অনেক ফুটবলার প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন জাতীয় দল আর ক্লাব ফুটবলে। তিনি বলেন, ‘আমার যে অতীত অভিজ্ঞতা একাডেমি চালানোর, সেই অভিজ্ঞতাগুলো হয়তো আমার কিছুটা কাজে লাগবে। আমি তো একাডেমি থেকে আসা মানুষ। সুতরাং যেকোনো একাডেমির প্রতি আমার একটা সফট কর্নার থাকবে। পৃষ্ঠপোষকতা অবশ্যই থাকবে। আর এলিট একাডেমি তো ফেডারেশনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুতরাং এটার প্রতি আলাদা নজর দিতেই হবে।’
নাসের শাহরিয়ার জাহেদী জেলা ফুটবল সংস্থাকে নিয়মিত লিগ আয়োজনে সচল রাখা আর প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে বাফুফে একাডেমি গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়েদের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলার জন্যেও জোর দিতে চান এই ফুটবল অন্তঃপ্রাণ সংগঠক। এ ছাড়া মেয়েদের ফুটবলের অভিজ্ঞতা বাড়াতে বিদেশি দলের সঙ্গে নিয়মিত হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচের আয়োজন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও অতীতে মেয়েরা দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। সর্বশেষ সাফেও মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কোনো রকম প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ ছাড়াই, যা নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে মেয়েদের।
এদিকে ফাহাদ করিম মার্কেটিং, সাব্বির আহমেদ আরেফ ঢাকা মহানগরী ফুটবল কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন। সদস্যদেরও বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল আছেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। জানা গেছে, শুধু ফিন্যান্স কমিটির মেয়াদ ৪ বছর নির্ধারিত হয়েছে। বাকি কমিটিগুলো এক বছরের জন্য। এক বছর পর মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে রিনিউ হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh