এক দফায় স্থবির নারী ফুটবল

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবল উদ্ভাসিত নারীদের সাফল্যে। টানা দুটি সাফ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে নারীদের জাতীয় ফুটবল দল। বাংলাদেশ দেখছে এশিয়ান নারী ফুটবলে চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন। কিন্তু বিধিবাম। হঠাৎ করে নারী ফুটবল অঙ্গনে নেমে এসেছে অমানিশার কালো ছায়া। কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন ফুটবলাররা। দিয়েছেন গণ-অবসরের হুমকি।   

নারী ফুটবলে বাংলাদেশের সাফল্য সহজে আসেনি। সাবিনা খাতুনদের দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে পরিচর্যা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটন আর পল স্মলির তত্ত্বাবধানে বছরজুড়ে চলেছে নিবিড় অনুশীলন। বিন্দু বিন্দু জল থেকে মহাসাগর গড়ে তোলার মতোই বয়সভিত্তিক থেকে জাতীয় পর্যায়ে মিলেছে সাফল্য। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো না। ২০১০ সালে বাংলাদেশের মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। মাত্র এক যুগের অল্প কিছু সময়ের মধ্যে মেয়েরা পরিণত হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবল শক্তিতে। ধন্যবাদটা বাফুফে পেতেই পারে। বিপরীত চিত্রও রয়েছে। দেশের জন্য নিয়মিত সাফল্য এনে দেওয়া মেয়েরা নানাভাবে বঞ্চিত। বাফুফের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের বেতন অনেক আন্দোলনের পর বেড়েছে। কিন্তু সেটাও নিয়মিত শোধ করা হয় না। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে বেতন পাননি মেয়েরা। দেশে গড়ে ওঠেনি নারী ফুটবল লিগের নির্দিষ্ট কাঠামো।

২০২৪ সালের মার্চে নারী দলের দায়িত্ব পান লাইবেরিয়া ও বতসোয়ানার সাবেক কোচ বাটলার। তিনি শুরু থেকেই দলে তারুণ্যের প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন। সাবিনাদের বেঞ্চে রেখে আস্থা রাখতে চেয়েছেন ঋতুপর্ণা আর মনিকাদের ওপর। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ছিল না। সাবিনা শুধু বাংলাদেশ না, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। কিন্তু তার বয়স ৩০ পেরিয়েছে। সানজিদা আর মারিয়া মান্ডাদের কেউ কেউ একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন ফর্ম বিবেচনায়। কিন্তু ২০২৪ সালে সাফ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করা ম্যাচে সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে তোপের মুখে পড়েন ইংলিশ কোচ। পরবর্তী সময়ে ভারতের বিপক্ষে সিনিয়রদের ম্যাচে ফেরান বাটলার। বাংলাদেশ পায় কাঙ্ক্ষিত জয়। শেষ পর্যন্ত শিরোপাও জেতে।   

আগামী জুনে এশিয়ান নারী ফুটবলের বাছাই। ফেব্রুয়ারি আর মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ খেলবে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। এরই মধ্যে নারীরা সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানের অধীনে শুরু করেছিল অনুশীলন। কিন্তু ২৫ জানুয়ারি বাটলার ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশে পা রাখার পরেই সৃষ্টি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। মেয়েরা সাফ জানিয়ে দেন, বাটলারের অধীনে অনুশীলনে অংশ নেবে না তারা। মানসিক হয়রানি ও উৎপীড়নের অভিযোগ এনে মেয়েরা বাফুফের কাছে বাটলারকে অপসারণের ‘আলটিমেটাম’ দিয়েছেন।

বাটলার বিষয়ে নারী ফুটবলাররাও প্রশ্নের সম্মুখীন। কোচের বিপক্ষে যেসব অভিযোগ উঠানো হয়েছে তার পক্ষে শক্ত যুক্তি দেখাতে পারেননি সাবিনারা। তাদের বক্তব্য, ‘আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন কোচ, সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে বিভাজন করেন, বডি শেমিং করেছেন।’ অনেকেই মনে করছেন, নারী ফুটবলারদের কোচ অপসারণের দাবিতে অবসরের হুমকি দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। যত বড় ফুটবলার হোন, এ ধরনের কথা বলা লজ্জাজনক। পরিস্থিতি ঘোলাটে সন্দেহ নেই। বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরোনো। কিন্তু বাফুফে বিষয়টি আমলে না নিয়ে অক্টোবরে ৫৮ বছর বয়সী কোচের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে। মেয়েদের সঙ্গে বাফুফের চুক্তিও নবায়ন হয়নি। মেয়েরা পাননি সাফ জয়ের পর ঘোষিত বোনাস।

নারী ফুটবলের সংকট সমাধানে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইমরুল হাসান। তিনি জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলে মেয়েদের ভালো অবস্থান রয়েছে। কমিটি কথা বলবে কোচ, ফুটবলার আর কোচিং প্যানেলের সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে। আশা করছি, পরিস্থিতির সুন্দর সমাধান হবে। তবে বাংলাদেশের ফুটবল কারো কাছে জিম্মি না। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।’ 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh