‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা গড়ে তুলুন’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি (ইউএইচসি) অর্জনে অভিন্ন লক্ষ্যের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘দারিদ্র্যর কারণে কেউ যেন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমি বিশ্বাস করি, সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ অর্জনের জন্য সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছানোর অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্তরের দেশগুলোর সহযোগিতাই মূল বিষয়।’

তিনি আরো বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউএইচসি ও এসডিজিস অর্জনে প্রতিটি দেশের জন্য স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশল প্রণয়নে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইকোসোক চেম্বারে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির (ইউএইচসি) ওপর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি ‘মাল্টি স্টেকহোল্ডার প্যানেল’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতিত্ব করেন।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজও ‘ইউএইচসি সমতা, অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়ন ও সবার জন্য সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলে, ম্যালেরিয়া নির্মূলে আরবিএম অংশীদারিত্ব বিষয়ক বোর্ডের সভাপতি মাহা তাইসির বারাকাত, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়ানিমা ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক জেফেরি সাখস।

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধার অধীনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্পদের সমাবেশ ঘটাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজের আওতায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগাড় করাটাই প্রধান বাধা এবং এই বাধা দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই পর্যাপ্ত মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও ভালভাবে জীবন যাপন করার অধিকার রয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষ রোগমুক্ত সুস্বাস্থ্য পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বলতে দু’টি জিনিসকে বুঝায়- প্রথমত, নারী বা পুরুষের সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে প্রত্যেককেই সমান সুযোগ দিতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, অভিন্ন সম্পদ ও সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকতে হবে।’

সম্পদের সুষম বন্টনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সার্বিক উন্নয়ন না হলে তা অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক ঐক্যে বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে। সম্পদের যথাযথ সুষম বন্টন না করে শুধুমাত্র প্রবৃদ্ধি বাড়লেই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক এখনো প্রয়োজনীয় স্বাস্ব্য সেবা পাচ্ছে না। অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ব্যয়ের কারণে প্রতি বছরে প্রায় একশত মিলিয়ন লোক অতি দারিদ্র্য হচ্ছে। প্রায় আটশত মিলিয়ন লোক তাদের পারিবারিক বাজেটের কমপক্ষে দশ শতাংশ ব্যয় করেন স্বাস্থ্য সেবায়। দরিদ্র লোকেরা বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা পায় না। ফলে, তাদের জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে।’ 

তিনি বলেন, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবায় সমতা নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ব্যয়ের কারণে আমরা কাউকে দরিদ্রতার মুখে ঠেলে দিতে পারি না। স্বাস্থ্য সেবা পেতে গিয়ে কাউকে যাতে দরিদ্র্য হতে না হয়, এ জন্য আমাদেরকে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্তর থেকে ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন মেটানো যেতে পারে। সংক্রমণযোগ্য ও অসংক্রমণযোগ্য রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই করা যেতে পারে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে সকল দেশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলো তৃণমূল পযার্য়ের জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পল্লীর জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সারাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ সকল ক্লিনিকের মধ্যে প্রতিদিন প্রতিটি ক্লিনিক থেকে গড়ে ৪০ জন রোগী স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই শিশু ও নারী। প্রতি মাসে এসব ক্লিনিকে প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি লোক স্বাস্থ্য সুবিধা নিতে আসে।

অটিজম ও নিউরোডেভলোপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। -বাসস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //