শ্রমবাজার ঝুঁকিতে ফেলবে না সরকার

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মীদের দুর্ভোগ নিয়ে মন্তব্যের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির। এর মধ্যেই দেশটির পুলিশ তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

রায়হান কবিরের গ্রেফতারের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। কারণ, বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রম বাজার হচ্ছে মালয়েশিয়া। সরকারি হিসেবে মালয়েশিয়াতে ছয় লাখের মতো বাংলাদেশি নিবন্ধিত শ্রমিক রয়েছে। এর বাইরে বেশ বড় সংখ্যায় অনিবন্ধিত শ্রমিকও রয়েছে।

তাই সবকিছু বিবেচনা করে রায়হান কবির ইস্যুতে সরকার দেশের স্বার্থকে জোর দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কোন অবস্থান নিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারকে কোনো প্রকার ঝুঁকিতে ফেলতে চাচ্ছে না। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের বক্তব্যে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, "এতে কোন সন্দেহ নেই যে সে বাংলাদেশের নাগরিক। তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আরও বড়। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।"

তিনি আরো বলেন, "মালয়েশিয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। আমাকে তাদের চিন্তা করতে হবে। একজন ব্যক্তি কী করলো, কেন করলো সে নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন তুলছি না। তার বিষয়টি এখানে অনেক পরের দিকে আসে।"

সরকার রায়হান কবিরকে নিয়ে শ্রম বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না উল্লেখ করে সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে- বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ তাদের নাগরিকেরা বিদেশে কোন আইনি জটিলতায় জড়িয়ে গেলে তাকে সহায়তা দিয়ে থাকে। এমনকি কোন ফৌজদারি অপরাধ হলে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের ব্যবস্থা করার নজিরও রয়েছে।

সৌদি আরবে কর্মরত ফিলিপিন্সের একজন গৃহকর্মী তার চাকুরীদাতাকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যু দণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন। এরপর ফিলিপিনো সরকার তাকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে সহায়তাসহ জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালিয়েছিল। রায়হান কবিরের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। তার ব্যাপারে ঠিক কি করা হচ্ছে তা নিয়ে গ্রেফতারের পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোন বক্তব্য আসেনি।

প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়াতে অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নিপীড়নের বিষয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনের একটি তথ্য চিত্রে সাক্ষাৎকার দেয়ার পর তাকে গত ২৪ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করার পর তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তার সাক্ষাৎকারের জন্য মালয়েশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন রায়হান কবির। তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেও অনেকে মন্তব্য পোস্ট করেছেন।

তবে, মালয়েশিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা তার গ্রেফতারের পর দেশটির সরকারের সমালোচনা করেছে। রায়হান কবিরকে 'স্পষ্টভাষী' উল্লেখ করে তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ঢাকাতেও অভিবাসীদের সংগঠন এবং অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এরকম ৬৪টি সংগঠনও বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //