বাংলাদেশের ঘাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা

সু চিকে বদনাম গোছানোর পরামর্শ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসেছে এগার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য দু’বছর আগে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা সই হলেও এ যাবত কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে বাধ্য করতে পারেনি। এমনকি আন্তর্জাতিক মহল থেকেও তেমন কোনো কর্যকর চাপ সৃষ্টি করা যায়নি।

এ রকম অচল অবস্থার মাঝে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আশা প্রকাশ করেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার সোচ্চার হবে। 

গতকাল (শনিবার) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন।

এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মোমেন বলেছেন, ‘আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অত্যন্ত পরিপক্ব রাজনীতিবিদ। তাঁর সঙ্গে আগেও আমরা কাজ করেছি। তিনি নির্বাচিত হওয়ার ফলে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সে বিষয়েও তাঁর সরকার সোচ্চার হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সম্প্রতি মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এখন অং সান সু চি সরকারের বহির্বিশ্বের কাছ থেকে বদনাম ঘোচানোর পালা।’

তবে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের মর্যাদা দিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সু চি সরকার আন্তরিক হবে এমনটি বিশ্বাস করে না ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা। এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জমিরউদ্দিন বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন কার্যক্রম গত পঞ্চাশ বছর ধরে একটানা চলছে। যদিও সম্প্রতি তা বিশ্ববাসীর নজরে এনেছে।   

তিনি জানান, চীন বা ভারত রোহিঙ্গাদের বন্ধু হবে না। কারণ, চীনের সাথে মিয়ানমারের সামরিক চুক্তি রয়েছে। রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। আর ভারতের রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থ।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের দুই বন্ধু দেশ ভারত ও চীনের কাছ থেকে কার্যকর কোনো সহায়তা মেলেনি এ যাবত। চীনের কাছ থেকে দু’একবার আশ্বাসবাণী মিললেও ভারত এরইমধ্যে মিয়ারমারকে সামরিক শক্তিতে বলীয়ান করে তুলছে যা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ অব ডেমোক্রাসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। আগামীকাল সোমবার আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আরো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসবে অং সান সুচি। ইতোমধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার টুইট বার্তায় সু চিকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ বলে নন্দিত অং সান সু চি‘র দল গত পাঁচবছর মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসীন থাকাকালেই রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে শতশত শিশু, নারী, যুবা, বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে, নারীদের ধর্ষণ করে আর আগুন দিয়ে ঘর-বাড়িপুড়িয়ে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে। যারা পেরেছে প্রাণে বেঁচে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশে। অনেকে নৌকায় পালাতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা গেছে। এরকম রাষ্ট্রীয় বর্বরতা পরিচালিত হয়েছে অং সান সুচি’র সরকারের আমলেই। আর সে কারণেই বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে সু চি’র বিরুদ্ধে।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মিয়ানমারের নেত্রী সু চি সোচ্চার না হবার কারণে তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবি ওঠে। তাকে দেয়া দু’একটি আন্তর্জাতিক সম্মানও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা উঠেছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।-রেডিও তেহরান

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //