বঙ্গবন্ধু হত্যার রায়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৫৯তম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন জজ সাহেবরা এই যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন... বাংলাদেশে যে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, এর ফলে তা দূর হয়েছিল। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধারা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়েছিল এই রায়ের মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, আমার মনে আছে, বিচারের রায় যেদিন দেওয়ার কথা, গোলাম রসুল সাহেবের (মরহুম বিচারক কাজী গোলাম রসুল) আদালতে। তিনি যেদিন এই রায় দেবেন, সেদিন ছিল ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। সেদিন বিএনপি-জামায়াত হরতাল ডেকেছিল; যাতে জজ সাহেব কোর্টে যেতে না পারেন, রায় দিতে না পারেন। তাছাড়াও তার ওপর অনেক জুলুম-অত্যাচার করারও চেষ্টা করা হয়েছিল।

এই বিচারকের সাহসের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অত্যান্ত সাহসী একজন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি কোনো কিছু মানেননি। সেই রায় কিন্তু গোলাম রসুল সাহেব দিয়ে যান। কারণ তার ওপরে, তার মেয়েদের... কী হয়েছিল সেটা আমি জানি। যাতে বিচারটা না হয়, তারা বাধা দিয়েছিল। আমি বলবো, এই যে সাহস দেখানো, এটাই ছিল বড় কথা, তিনি সেই রায়টা দিয়ে যান।

বিচার বিভাগে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন প্রযুক্তির ব্যবহার করে সুযোগ পাচ্ছি, তেমনি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কার্যকর্মের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। এজন্য আমরা আইন করছি, এর বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এই কারণেই এখন কিন্তু আগের মতো মল্লযুদ্ধ হয় না, এখন বোতাম টিপে হয়। এমনকি এখন অনলাইনে ট্রেনিং দেয়া হয় কিভাবে বোমা বানাবে, কিভাবে মানুষ খুন করবে। কাজেই সব ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী আইনগুলোকে সরকার গুরুত্বের সাথে দেখে।

ভার্চুয়াল আদালত প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারির সময় ভার্চুয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, বিচার যাতে চলে সেই ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করি। এরপর ভার্চুয়াল আদালত প্রতিষ্ঠার পরে অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের আইনজীবী যারা তাদের জন্যও সুবিধা হয়েছে যে, যেকোনো জায়গা থেকেই আদালত পরিচালনা করতে পারছেন। সারাদেশে ই-জুডিশিয়াল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ই-জুডিশিয়ালি চালু করা গেলে মামলা ব্যবস্থাপনায় আরও গতি আসবে।

বিচারকদের সুযোগ সুবিধা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে দেব। ইতোমধ্যে জায়গা দেখা হয়েছে, সেটা কার্যকর কিনা সেটা দেখা হচ্ছে। সেই সাথে আমরা একটা আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করব। বিচারকদের বাসস্থানের জন্য আমরা ফ্লাট করে দিচ্ছি। এটা শুধু ঢাকা শহরে না প্রতিটি জেলায় জেলায় আমরা নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেব। সেইসঙ্গে বিচারকদের গাড়ি ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য গাড়ি ঋণ নগদায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, সব মানুষ যেনো ন্যায় বিচার পায়, মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয় এবং একটা স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার সৃষ্টি হয় সেই পরিবেশটা আমরা চাই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //