ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান দুদক কর্মকর্তারা

গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় দুদক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ-সংবলিত একটি প্রতিবেদন জমা দেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। পরে গত বছরের জুলাইয়ে অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদক।

গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হচ্ছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের সময় অবৈধভাবে আইনজীবী ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা এবং কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা।

এ বিষয়ে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে যে অভিযোগগুলো পাই, প্রাথমিকভাবে যদি আমাদের কাছে মনে হয় যে এসব অভিযোগের যথেষ্ট উপাদান আছে, তখন আমরা অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের যেসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য বাছাই করেছি, সেগুলোর অনুসন্ধানকাজ চলছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কে জড়িত বা জড়িত না, এগুলো আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আমরা বস্তুনিষ্ঠভাবেই অভিযোগগুলোকে বিবেচনা করার চেষ্টা করছি।

কমিশনার আরও বলেন, কোনো অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানাননি। অর্থাৎ এ নিয়ে কোনও প্রতিবেদন এখনও দাখিল করা হয়নি। দ্রুতই এ কাজটি শেষ হবে। অনুসন্ধান শেষে আমরা যেই প্রতিবেদন পাবো, সেটা কমিশনে পর্যালোচনা করা হবে। যদি মনে হয় এ নিয়ে আরও অগ্রসর হওয়া দরকার, তাহলে আমরা সেটি তদন্তের জন্য বিবেচনা করবো এবং সেটা অবশ্যই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। আর যদি মনে হয়, অনুসন্ধানে প্রাথমিক যে তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর কোনও গুরুত্ব বহন করে না, তাহলে সেটা হয়তো সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। তবে এটা এখনই বলা যাবে না, এর পরিণতি কোন পর্যায়ে গিয়ে শেষ হবে।

ড. মোজাম্মেল বলেন, সবকিছু নির্ভর করে অনুসন্ধান কর্মকর্তার ওপর। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ করার পর তিনি যদি না-ও আসেন, তাহলেও আমাদের অনুসন্ধান কাজ বিঘ্নিত হয় না। অনেককে পাওয়াও যায় না। তারপরও অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন আপনারা যার নাম বলেছেন, তার (ড. ইউনূস) সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই তিনি নেবেন। যদি কেউ সামাজিকভাবে খুবই প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হন, তাহলে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা কমিশনের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন, কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা অগ্রসর হবেন। এর বেশি কমিশনের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এটি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার নিজস্ব ব্যাপার। তিনি শুনবেন কিনা। যদি এমন হয়, এমন সব তথ্য ও রেকর্ডপত্র অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের হাতে এসেছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই, তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ না করলেও আপত্তির কোনও কারণ নেই।’

কমিশনার বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এ বিষয়গুলো দেখছেন। এগুলো দেখতে গিয়ে যেসব ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া দরকার, কথা বলা দরকার, সে কাজগুলো পর্যায়ক্রমে নেওয়া হচ্ছে। আমি আশা করি অস্বাভাবিক কোনও বিলম্ব হবে না। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান রিপোর্ট পাওয়ার পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা বলা যাবে। তবে অনুসন্ধান কাজে কোনও টাইমলাইন দিতে পারবো না।

ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, প্রত্যেক অনুসন্ধান কর্মকর্তার ওপর চাপ আছে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। তারা তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা বলতে পারবো না যে এটা এত দিনের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। আশা করছি দ্রুততার সঙ্গে তারা তাদের কাজ শেষ করবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //