সরকারি চাকরিজীবী বিধিমালা সংস্কারের উদ্যোগ

প্রতিবছর সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি চাকুরেদের। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২৩ সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মচারীরা কোনো সম্প্রচার মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না। নির্বাচনের আগেই এই বিধিমালাটি কার্যকর করতে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ সংক্রান্ত যে বিধিমালাটি রয়েছে, সেটি ১৯৭৯ সালের অর্থাৎ ৪৩ বছরের পুরনো। এই প্রেক্ষাপটে এবার নতুন আচরণ বিধিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২২ নামে এই আইনের খসড়াটি করা হলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২৩ নামে নতুন করে খসড়ার কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

চাকরিতে যোগ দেয়ার সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসেবে দিতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর আয়করে তাদের সম্পদের হিসেব থাকে। কিন্তু এই হিসেবে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদে অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।

ফলে গেলো বছর জানুয়ারি মাসে সবার সম্পদের হিসেব জমা দিতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে গড়িমসি করতে দেখা গেছে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে। তাই এবার পুরনো আইনে নতুন কয়েকটি ধারা যুক্ত করে একটি নতুন বিধিমালা করা হচ্ছে।

নতুন এ আইনে প্রত্যেক কর্মচারীকে প্রতি বছর তাদের সম্পদের হিসেব দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মচারী ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট বা অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না বা কোনো সংবাদপত্র বা সাময়িকীতে নিজ নামে বা বেনামে নিবন্ধ বা পত্র লিখতে পারবেন না।

সেইসাথে মূল্যবান সামগ্রী, অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা হস্তান্তর এবং উপহার গ্রহণ করতে পারবেন না, যে উপহার গ্রহণ সরকারি কর্তব্য কোনো ধরনের দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ করে। সরকারি কর্মচারী তার চাকরি সংক্রান্ত কোনো দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার বা সরকারি কর্মচারীর উপর রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব খাটাতে পারবেন না।

সরকারি কর্মচারী নিজে বা পরিবারের কোনো সদস্যকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের প্রচলিত কোনো আইনে সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজ হিসেবে এমন কোনো আন্দোলনে বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোনো উপায়ে সহযোগিতা করতে পারবেন না। সরকারি কর্মচারী কোনো বিষয়ে তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো অনুরোধ বা প্রস্তাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক বা বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না।

আরও বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন না যার মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। তবে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনায় বিধি নিষেধ নেই। এছাড়া নতুন বিধিমালায়ও কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে বা অন্য কোনো চাকরি করতে পারবেন না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, চাকরিতে ঢোকার সময় প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীকে সম্পদের হিসেব দিতে হয়। এরপর আয়করও দেন প্রতিবছর। এসব হিসেবে অপ্রত্যাশিত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায় কখনও কখনও। সম্পদের হিসেবে অসামঞ্জস্য থাকলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী এখনও তাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়। এসবের পরও প্রশাসনে অধিক স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি কমানোর জন্যই নতুন আইনটি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //