শেখ হাসিনাই বাংলাদেশে জনপ্রিয় নেতা: জরিপ

বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে বিরাজমান বিভিন্ন হতাশা বিরোধীদের জনসমর্থন বাড়িয়ে তুলছে। কিন্তু তা শেখ হাসিনা সরকারকে এখনও ততটা দুর্বল করতে পারেনি। এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর জাতীয় সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

আইআরআই হল একটি অলাভজনক সংস্থা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার দ্বারা অর্থায়নকৃত এবং সমর্থিত। ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে বেশ ভালো করছেন। সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে শিক্ষার উন্নয়ন-সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পেয়েছে।

জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র ছয় মাস বাকি। এই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। তাই এটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক প্রচারণার মুখোমুখি। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যাও মোকাবিলা করছে সরকার।

এই বছরের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমস্যা আরও বেড়ে যায়, যখন ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার সরকারকে গণতন্ত্রের প্রমাণপত্র দেখানোর জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে। এই পটভূমিতে, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় সমীক্ষায় দেখা যায়- এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।

আইআরআইয়ের জরিপে অংশ নেওয়া ৯২ শতাংশ জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৫৬ শতাংশ মনে করছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করা না হলেও বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। আর ফোকাস গ্রুপ সমীক্ষায় অনেক বিএনপি সমর্থকও তাদের দলকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক ওই সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের নাগরিকরা অর্থনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে হতাশ। তবে সরকারের অবকাঠামো ও উন্নয়ন নীতিমালা শেখ হাসিনার জনসমর্থনকে চাঙা করেছে এবং তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি ‘প্রাক-নির্বাচন শট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি) এর ওয়েবসাইটে গত ৯ আগস্ট, ‘বাংলাদেশ: সার্ভে রিভিলস প্রিমিয়ার রিমেইনস পপুলার ডিসপাইট গ্রোয়িং পাবলিক ডিসকনটেন্ট’

শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। নিবন্ধটি লিখেছেন আইআরআই’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডেভিড হুগস্ট্রা ও সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড।

ওই নিবন্ধে তারা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেছেন, যদিও বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি উভয়ই রাজপথে শক্তি দেখাচ্ছে। সমর্থকদের জড়ো করে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করছে। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও নির্বাচন ঘিরে মানুষের মত বোঝার জন্য খুব কমই তথ্য-উপাত্ত মিলছে। তারপরও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সাম্প্রতিক জাতীয় সমীক্ষা এবং ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) সমীক্ষায় বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ নিয়ে মানুষের মনোভাবের বিভিন্ন আঙ্গিক প্রকাশ পেয়েছে।

ওই নিবন্ধে লেখকরা বলেছেন, গবেষণায় দেখা যায়- যদিও সাধারণ নাগরিকরা অর্থনীতি এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ। তবে অবকাঠামো ও সরকারের উন্নয়ন নীতিমালা প্রধানমন্ত্রীর জনসমর্থনকে চাঙা করেছে। তারপরও দেশজুড়ে বিরোধী দলের জনসমর্থন ক্রমশ বাড়ছে এবং তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে সংশয়ী বলে মনে হচ্ছে।

আইআরআই - এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষ হতাশ। অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মানুষের মধ্যে এমন মনোভাব বাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে নেই। সাধারণ মানুষদের মতে, রাজনৈতিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করছে না। অন্যরা দুর্নীতিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন, যা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ারই একটি গুরুতর সমস্যা। 

সূত্র: ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //