মন্ত্রীর সমালোচনা করা নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের চুক্তি বাতিল

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৮ অক্টোবর) তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদী দখলের পেছনে ‘একজন নারী মন্ত্রীর ভূমিকা’ রয়েছে বলে বক্তব্য দেওয়ার ২৪ দিনের মাথায় মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে তার নিয়োগ বাতিল করল সরকার।

গেল বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মনজুর আহমেদকে তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’-এর ধারা ৫(২) এবং একই আইনের ধারা ৫(৩) অনুযায়ী তিনি এ নিয়োগ পেয়েছিলেন। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নদী দখল নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছিলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নাম না উল্লেখ করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন। ওই দিন তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। তিনি বলেছিলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। এখানে শতশত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। সরকার নিয়োগ দিয়েছে, আবার সরকারই বাতিল করেছে। নদী রক্ষায় কতটা সততার সঙ্গে কাজ করেছি, তার বিচার জনগণ করবে।

এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমালোচনা করেছেন মনজুর আহমেদ। ২০২২ সালে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে বিচার করে কারাগারে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় খাল পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, খালের ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে সেজন্য খালের মুখে নেট দিতে বলা হয়েছিল। উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো সে কাজ করেনি। এ জন্য করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও তিনি শাস্তির কথা বলেন।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ওয়াসার এমডি, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন করব আমরা, চাইব যেন তাদের ছয় মাসের জেল, চার লাখ টাকা জরিমানা হয়।’

তবে প্রভাবশালীদের নিয়ে মন্তব্যের কারণে তার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে কি না সে নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, আড়িয়াল খাঁসহ সব নদ-নদীর জলদস্যু, ভূমিদস্যু, বালুখেকো, দখলদার, দূষণকারীর বিজয় হয়েছে। তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়ার পর অনেক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলাম। এটা থেমে গেল।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান। তিনি এখন থেকে নিয়মিত সিজিএসে সময় দেবেন বলে জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //