বিগত আওয়ামী লীগের আমলে ‘বিতর্কিত’ বিদ্যুতের (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-এর অধীনে অনুমোদিত ৪৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বতীকালীন সরকার। জানা গেছে, এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ৩৬৩০ মেগাওয়াট। বাতিলের তালিকায় ১২টি রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া বাকি ৩১টি বাতিল প্রকল্পগুলো হচ্ছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিশেষ আইনের অধীনে হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন না হওয়া এবং বেশি কিছু প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এখন থেকে ২০১০ সালের বিশেষ আইনের অধীনে কোনো কাজ করব না এবং ২০১০ সালের আইনের অধীনে যেসব প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে সেগুলোর কাজ করব না। যেগুলো চুক্তি হয়ে গেছে, যেগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, সেগুলো আপাতত অনার করব।
তিনি বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি আর নবায়ন করা হবে না। বিচার বিভাগের বিচারপতি দিয়ে একটি কমিটি করা হবে, তারা এই আইনের অধীনে করা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কি না তা দেখবে।
সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বিদ্যুৎ ভবনে সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত ১৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত বিশেষ আইনের অধীনে করা প্রকল্পের সব আলোচনা, প্রকল্প নির্বাচন এবং ক্রয় প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বাতিল হওয়া রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ৯৫২ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্র ইতিমধ্যেই চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। বাকি ৩১টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলো তড়িঘড়ি অনুমোদন করা হয়েছিল এবং বিশেষ পাওয়ার অ্যাক্টের অধীনে ইন্টেন্টের চিঠি (খড়ও) মঞ্জুর করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল করা হবে।
নবায়নযোগ্য ৩১ প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এখানেও একই নীতিতে যদি চুক্তি হয়ে গিয়ে থাকে বা অপারেশনে থাকে সেগুলো থাকবে। যেগুলো চুক্তি হয়নি ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ হয়েছে সেগুলো আবার উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে হবে।
মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র যেগুলো বাতিল করা হচ্ছে সেগুলোর একাধিকবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তারা প্রচুর লাভ করেছে। এখন বাতিল করলেও তাদের কোনো লস হবে না। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামীতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ আইনের অধীনে প্রকল্প পেতে প্রচুর টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ বিশেষ আইনের অধীনে ১৩৩টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রক্রিয়া করেছে, যার মোট সক্ষমতা ১৩৪৯৪.২২ মেগাওয়াট। এই প্রকল্পগুলোর খুবই অল্প এখন পর্যন্ত সরকারি টাকায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এদিকে এসব প্রকল্প বাতিলের সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, এতদিন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছি, কিন্তু আমলে নেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই প্রকল্পগুলো বাতিলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের অযৌক্তিক বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের দ্রুত বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর অধীনে অনুমোদিত সব বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করা। তিনি বিদ্যুতের দাম কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করার দাবি জানান।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh