১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আনুষ্ঠানিভাবে বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ প্রদর্শন করার বিধান অর্থ আইন ২০২৪ এর মাধ্যমে সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু একজন নিয়মিত করদাতাকে তার আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর প্রদান করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রদেয় করের ওপর আরও সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ প্রদান করতে হয়। তাই মাত্র ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দেওয়া একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থার জন্য বৈষম্যমূলক।
এমতাবস্থায়, একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন (এস আর ও নং ৩০৩-আইন/আয়কর-৪৬/২০২৪, তারিখ: ০২/০৯/২০২৪) দ্বারা, ১৫ শতাংশ আয়কর পরিশোধ করে নগদ অর্থসহ অপ্রদর্শিত সমজাতীয় পরিসম্পদ প্রদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়ানুগ ও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনার সরকার ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে এক বছরের জন্য নগদ টাকার পাশাপাশি জমি, ফ্ল্যাট-প্লটসহ স্থাবর সম্পদ কেনার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। সর্বোচ্চ করহারের চেয়ে কম কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এই সুবিধার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা ছিল।
অবশেষে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কালো টাকা সাদা করার এই বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সরকার গঠনের পর গত ২৮ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগতভাবে বিধানটি বাতিলের ব্যাপারে একমত হয়। কালো টাকা সাদা করার বিতর্কিত এই সুযোগ কার্যকর করার দুই মাসের মাথায় এটি বাতিল করা হলো।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় কালোটাকা সাদা করার এই সুযোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা নগদ টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ ছিল। আবার ফ্ল্যাট-প্লট কিনেও তা বৈধ করা যেত। এর জন্য এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর দেওয়ার বিধান করা হয়েছিল।
এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে অর্থাৎ সাদা হয়েছে। তবে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ছিল না।
সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এই সুযোগ নেননি। এর একবছর পরেই আবারও কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh