করোনায় ভিটামিন ডি’র অভাব বিপজ্জনক হতে পারে

ভিটামিন ডি- শরীরের অন্যতম জরুরি একটি ভিটামিন। এটি যে কেবল হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য ভাল রাখে এমন নয়, যেকোনো সংক্রমণ ঠেকাতে ও শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলতে তার বিরাট ভূমিকা আছে। 

আছে আরো অনেক উপযোগিতা। যেমন:

•  ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে ও সংক্রমণ ঠেকাতে তার ভূমিকা আছে। সঠিক মাত্রায় থাকলে টিবি, হাঁপানি, সিওপিডি ইত্যাদির আশঙ্কা কমে। রোগ হলে ভালো হয় সহজে। কমে অন্য সংক্রমণের আশঙ্কাও।

•  হার্ট ফেলিওর, ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের আশঙ্কা কমায়। ঠেকায় হাই প্রেশার বা ডায়াবেটিস। রোগ হলে চিকিৎসায় কতটা ভাল ফল হবে তাও নির্ভর করে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আছে কি নেই, তার উপরে।

• বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হার কমতে পারে এই ভিটামিনের সাপ্লিমেন্টে।

এদিকে চিকিৎসকরা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবার আগে প্রভাব ফেলছে। কাজেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ফুসফুসকে যদি সতেজ রাখা যায়, বাড়ানো যায় তার কর্মক্ষমতা, রোগের আশঙ্কা যেমন কমে, কমে জটিলতার আশঙ্কাও। তার উপর হৃদরোগ, হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, বেশি বয়স, সবই কভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর। এরা যত ঠিক থাকবে, তত রোগের দাপট কমবে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ত্বকে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় ধরে রোদ লাগলে ভিটামিন ডি তৈরি হয় ঠিকই। কিন্তু সমীক্ষা বলে গরম ও রং কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে বেশির ভাগ মানুষই রোদ থেকে দূরে থাকেন। ব্যবহার করেন ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন। ফলে দিনে ৩০-৪০ মিনিট খোলা শরীরে রোদ লাগানোর যে নিয়ম মানলে সমস্যা মেটে, তা হয় না। মাঠে বা পার্কে হাঁটাহাটি করলে কিছুটা কাজ হয়। সেটাও হয়ে ওঠে না। কারণ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ জিমে ব্যায়াম করাই বেশি পছন্দ করেন। এর সাথে আরো কয়েকটি কারণ যুক্ত হলে বিপদ আরো বাড়ে।

ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে কী হতে পারে

•  গায়ের রং কালো হলে রোদ পোহালেও ত্বকের রঞ্জক মেলাটোনিনের কারণে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি নাও হতে পারে। বয়স্ক মানুষদের এই সমস্যা বেশি হয়।

• ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- তৈলাক্ত মাছ, ক্যানে ভরা টুনা, অতিরিক্ত ভিটামিন ডি মেশানো দুধ-সোয়ামিল্ক-ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল-কমলালেবুর রস, চিজ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কড লিভার অয়েল, গরুর মেটে ইত্যাদি খাবার না খেলে বা কম খেলে সমস্যা হতে পারে। সমস্যা হয় ওজন কমানোর তাগিদে ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার ছেড়ে দিলে। কারণ খাবারের ভিটামিন ডি ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়েই শরীরে ঢোকে, এমটা জানালেন পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র।

• পেটের কিছু গোলমাল, যেমন- ক্রোনস ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদি থাকলে খাবারের ভিটামিন ডি শরীরে শোষিত হতে পারে না।

•  সমস্যা হয় খুব মোটা হলেও। বিএমআই ৩০-এর উপরে গেলেই শুরু হয় ঝামেলা।

 জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, সাধারণ অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করে সাপ্লিমেন্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভিটামিন ডি ২০ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটারের নিচে গেলে ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু এখন যেহেতু মানুষ ঘরে থাকছেন বেশি, বয়স্ক মানুষ, কভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর আছে, যেমন- হৃদরোগ, হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, ধূমপান ইত্যাদি রয়েছে, ঋতুবন্ধ হয়ে গেছে এমন নারীরা ডাক্তারের সাথে কথা বলে সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। 

তিনি বলেন, রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা সহজে বিপদসীমার উপরে যায় না। উলটো দিকে, শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //