দূরে থাক হতাশা

আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে নানা প্রতিযোগিতার চাপে মানুষ ক্রমশ পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন, একা ও হতাশ হয়ে পড়ছে। আর এই সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। সারা পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এখন ভুগছে হতাশা আর একাকিত্বে। যার ফলে অনেকে আত্মহননের মতো ভয়ানক পরিণতিও বরণ করে নিচ্ছে। 

আমাদের জীবনে হতাশার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। আনন্দ বিনোদনের অভাব, পারিবারিক ভাঙন, অর্থনৈতিক দৈন্যতা, বেকারত্ব ও প্রেমহীনতা মানুষের মাঝে তৈরি করে দিচ্ছে একাকিত্ববোধ; যা জন্ম দিচ্ছে হতাশার। কিন্তু কারণ যেটাই হোক না কেন, আমাদের বোঝা উচিত জীবনের যে কোনো কাজে সফলতা ও ব্যর্থতা আসতেই পারে। কিন্তু সব সময় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব না কষে বরং আনন্দের মুহূর্তগুলোকে মনের মধ্যে ধরে রাখা দরকার। ব্যর্থতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে সামনের সময়ের জন্য আশাবাদি হতে হবে। প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিয়ে এই হতাশা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। 

হতাশার লক্ষণ

হতাশার লক্ষণ হলো মন ভালো না থাকা, কাজে অনাগ্রহ, ক্ষুধা ও ঘুম কমে যাওয়া, ওজনের পরিবর্তন হওয়া। খুব বেশি হতাশ হয়ে পড়লে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়।

কী করতে হবে

*প্রথমেই হতাশার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সমস্যাটি সমাধান করতে সামাজিক সম্পর্কগুলো জোরদার করা দরকার। পরিবার প্রিয়জনের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে এবং তাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ শেয়ার করতে হবে। 

*নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। হতাশা থেকে দূরে থাকার জন্য সুস্থ থাকা অত্যন্ত জরুরি। গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের মস্তিষ্কই তার সকল চিন্তা-ভাবনা আর আবেগের স্থান। মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের যাবতীয় মানসিক বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা আর স্নায়ু। মন খারাপ বা অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা থাকলে এই স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলোর উপর। যেমন, ত্বক রুক্ষ হয়ে ওঠে, বলিরেখা দেখা দেয় এবং এমনকি চুল পড়াও শুরু হয়।

*মন খুলে হাসতে হবে। সেই সাথে কী নেই তা নিয়ে না ভেবে যা আছে তা দিয়ে নিজেকে সুখি করার চেষ্টা করুণ। জীবন যাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন।

*যেকোনো ঘটনার খারাপ দিক খুঁজবেন না। ছোট একটি খুঁতকে অনেক বড় করে দেখবেন না। না পাওয়ার ঝঞ্ঝাটে মন খারাপ করে থাকবেন না। সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়ুন। তাঁদের জীবনী আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে।

* জীবনের পরিবর্তনগুলোকে মেনে নিতে চেষ্টা করুন। শিশুদের হতাশা কাটাতে মা-বাবার বড় ভূমিকা রয়েছে। যেকোনো বিষয়ে তাদের অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বয়ঃসন্ধিকালে সংকোচ না করে তাকে সঠিক তথ্যগুলো দিন। 

*যদি মনে হয়, কাজ করতে গিয়ে আপনি বেশি হতাশ হয়ে পড়ছেন, তাহলে ছুটি নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন। মনের বয়স বাড়তে দেওয়া যাবে না।

*বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিজের বাসার কাছাকাছি রাখুন। সব ভাইবোন মিলে তাদের হাতে প্রতি মাসে কিছু টাকা তুলে দিন ইচ্ছেমতো খরচ করার জন্য। ব্যস্ততার মাঝেও সময় দিন তাদের।

*জীবনের প্রতিটি সম্পর্কে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা ঠিক রাখুন। আপনার কাছের মানুষটি হতাশাগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য করতে পারেন আপনিই।

জীবনের কষ্টের ভেতর থেকে সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। ডেল কার্নেগি বলেছেন, মানুষের জীবন একটাই। তাই আমাদের উচিত এটিকে সর্বোচ্চভাবে উপভোগ করা। 

মোট কথা জীবনকে নতুন করে ভাবতে হবে। বিপদে মনোবল না হারিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজের শপথ নিন। কখনোই নিজেকে ছোট ভাববেন না। মনে রাখবেন যে ব্যাক্তি যত উৎফুল্ল, তার কাজ করার ক্ষমতা তত বেশি। আর চলার পথে মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট আসবেই। সেগুলোকে অতিক্রম করার সাহস রাখুন।

সর্বোপরি হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে মনে রাখতে হবে আপনি যেমনই হন না কেন আপনার মত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ কোথাও নেই। পৃথিবীকে দেবার মতন আপনার কাছে এখনো অনেক কিছুই বাকি। তাই নিজেকে অহেতুক অন্যের চেয়ে ছোট না ভেবে নিজের মত করে বাঁচুন এবং আনন্দে থাকুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : হতাশা

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //