শরীরে আয়রনের ঘাটতি বুঝবেন যেসব লক্ষণে

বিশ্বের বহু দেশেই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া একটা বড় সমস্যা। আয়রনের অভাবেই মূলত অ্যানিমিয়া হয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। 

অধিকাংশ সময়েই মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পুরোপুরি পূরণ হয় না। কিন্তু সামান্য ঘরোয়া কিছু খাবারদাবারেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রনের উৎস। কী খেলে ঠিক থাকবে আয়রনের মাত্রা, আর কী করেই বা বুঝবেন আয়রনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে আপনার শরীরে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তাল্পতা কার্যত কোনও রোগ নয়। তবে রোগের ইঙ্গিত তো বটেই। রক্তাল্পতার কারণে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের রোগ। রক্তাল্পতা মূলত রক্তক্ষয়, লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন কমে যাওয়া ও লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে হয়।

যেসব নারীরা ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাতে ভোগেন তাদের অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার দীর্ঘমেয়াদি কোনো অসুখ কারণেও রক্তাল্পতা হতে পারে। যারা দীর্ঘদিন অর্শ্ব রোগে ভুগছেন তারা এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা ভুগছেন তারাও অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।

কী কী উপসর্গ দেখে বোঝা যাবে যে শরীরে আয়রনের অভাব আছে কি না-

১. আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে শরীর হঠাৎ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সারাদিনই শরীরে ক্লান্তি বোধ হতে পারে।

২. চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, সামান্য কাজে হাঁপিয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় বা ব্যথা, কথায় কথায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা।

৩. নখ ফেটে যাওয়া এবং চুল পড়াও হতে পারে আয়রন ঘাটতির লক্ষণ। 

৪. অনেক সময় আয়রনের অভাবে মুখের দুপাশ ফাটতে শুরু করে, জিভ শুকিয়ে যাওয়া এসবও হতে পারে আয়রন ঘাটতির কারণে।

৫. প্রায় প্রতিদিনই মাথার যন্ত্রণায় ভুগলে তাহলে এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সাইনাস, মাইগ্রেন ইত্যাদি। কিন্তু অনেক সময়ে আয়রনের অভাব হলেও প্রায়ই মাথা ধরার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬. যদিও বিভিন্ন কারণে ঘনঘন জ্বর আসতে পারে। তবে সব সময় ঠান্ডা লাগার কারণে নয়, আয়রনের অভাবেও এটি হতে পারে।

কতটা আয়রন প্রয়োজন একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুর প্রতিদিন অন্তত ১০ মিলিগ্রাম করে আয়রন প্রয়োজন হয় শরীরে। ৯ থেকে ১৩ বছরের কিশোর-কিশোরীর প্রয়োজন প্রতিদিন ৮ মিলিগ্রাম করে। 

নারীদের বিশেষভাবে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রয়োজন ১৮ মিলিগ্রাম করে আয়রন। যেহেতু এই পুরো পর্ব জুড়েই নারীর ঋতুচক্র চলতে থাকে। তাই মেয়েদের ক্ষেত্রে আয়রনের চাহিদা অনেকটাই বেশি।

ওই বয়সের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের যেখানে দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম আয়রন যথেষ্ট।

কোন কোন খাবার খেলে পূরণ হবে শরীরের আয়রনের ঘাটতি 

বাইরে থেকে সাপ্লিমেন্ট না নিয়েও সাধারণ খাবারের মাধ্যমেই কিন্তু সেরে ফেলা যায় সেই কাজটা। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিনস বা ডাল জাতীয় দানাশস্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। সিদ্ধ বিন প্রায় ৭ থেকে ৯ গ্রাম পর্যন্ত আয়রন জোগায় শরীরে। এক কাপ ছোলাতেও রয়েছে ৫ গ্রাম পর্যন্ত আয়রন। 

খাবারের তালিকায় রাখুন ড্রাই ফ্রুটস। কিসমিস, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম। এসবে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরকে আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। 

আমলকি একটি সুপার ফুড কারণ এটি ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় আমলকি অ্যানিমিয়া নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। এটি আচার, মিছরি বা মোরাব্বাসহ অনেক আকারে খাওয়া যেতে পারে। আমলকি সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। প্রতিদিন একটি করে আমলকি খেলে তা রক্ত ​​ও শরীরের জন্য দারুণ কিছু করতে পারে।

প্রতিদিন পালং শাক, সবজি, স্যুপ খান। পালং শাকে আয়রন রয়েছ প্রচুর। এছাড়াও ছানা বা পনির, ডিম, চিকেন, কলিজা খেলেও শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন পাবে।

আয়রনের খুব চমৎকার একটি উৎস হলো খেজুর। এর মধ্যে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬। খেজুরের মধ্যে রয়েছে আঁশ। এটিও প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।

আপেলে আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি। একটি মাঝারি আকারের আপেলে রয়েছে শূন্য দশমিক তিন এক মিলিগ্রাম আয়রন। এটি হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। ডেজার্ট, সালাদ অথবা স্মুদি তৈরিতে আপেল ব্যবহার করতে পারেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //