শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি শরীরের অভ্যন্তরেই উৎপন্ন হয়। এর পর্যাপ্ত মাত্রা শরীরে ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়াও এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
হাড় ও দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশকেও সহজ করে তোলে ভিটামিন ডি। মাংসপেশির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে শিশুর হাড় নরম হয়ে বেঁকে যায়। এ অবস্থার নাম রিকেটস। বয়স্কদের ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে অস্টিওম্যালাশিয়া হতে পারে। এছাড়া এই ভিটামিনের ঘাটতিতে শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমে যায়, হাড় ক্ষয় শুরু হয়।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মহামারি সংক্রান্ত গবেষণাতেও বলা হয়েছে— ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ত্বকের ব্যাধিতে, এমনকি, ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধে উপকারী। এটি শরীরের পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। শরীরের দুর্বল পেশিকে সবল করতে প্রাচীন যুগেও শরীরে সূর্যালোক লাগানোর প্রথা ছিল যা আসলে দেহে ভিটামিন ডি-ই সরবরাহ করে।
শীতকালে দেহে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ডি’র অভাবে শীতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এই সময় দেহে ক্যালশিয়ামের বিপাক যথাযথ বজায় রাখার জন্য প্রতি দিন ১০-১৫ মিনিটের সরাসরি সূর্যালোক প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি’র ঘাটতি বোঝা যাবে যেসব লক্ষণ দেখে
১. ভিটামিন ডি’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলোর মধ্যে একটি হলো- দেহের প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখা যাতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয় দেহ।
২. দেখা যায় ভিটামিন ডি’র অভাব রয়েছে এমন নারীদের সন্তানধারণের সম্ভাবনা কম।
৩. হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে খেয়াল করতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি কমে গেছে কি না।
৪. হাড় ও পেশিতে দুর্বলতা ও ব্যথা, অস্থিসন্ধির বিকৃতি, দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ভিটামিন ডি’র ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
৫. শরীরে ভিটামিন ডি’র মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন করতে পারে। ৬. স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভালভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি আপনি অলস ও ক্লান্ত বোধ করেন তবে এটি ভিটামিন ডি’র অভাবের সূচক হতেই পারে।
৭. স্থূল ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ মেদবহুল কোষ শরীরে ভিটামিন ডি নিঃসরণে বাধা দেয়।
যেসব খাবারে আছে ভিটামিন ডি
গবেষকরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে, যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-
বিভিন্ন ধরনের মাছ
বিভিন্ন মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ স্যামন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সার্ডিন, টুনা, ম্যাককেরেলে পাবেন ভিটামিন ডি। দৈনিক ভিটামিন ডি’র চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে একটি টুনা মাছের স্যান্ডউইচ বা তিন আউন্স ওজনের একটি স্যামন মাছের টুকরো থেকে।
মাশরুম
মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এই মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। পরটোবেললো মাশরুম সূর্যের আলোয় বড় হয়, এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি। নিয়মিত মাশরুম খেতে পারেন।
ডিম
ডিমে অল্প পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন তাদের ডিমের কুসুম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।
দুধ
দুধ খুব বেশি ভিটামিন ‘ডি’ প্রদান করে না। তবে এটিকে ভিটামিন ‘ডি’ দিয়ে পরিণত করা যায়। কিছু দেশে গরুর দুধকে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। এক কাপ দুধে প্রায় ১২৫ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিনের ভালো উৎস দুধ।
লিভার বা যকৃৎ
রান্না করা ২.৫ আউন্স বা ৭০ গ্রাম পরিমাণ গরুর কলিজায় ৩৬ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণীতে থাকে না। তবে এতে কোলেস্টেরল বেশি বলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
সাপ্লিমেন্টারি
উচ্চমাত্রার ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার সচরাচর না মেলায় সাধারণ মানুষ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টারির প্রয়োজন পড়ে। কারোর ভিটামিন ডি’র মাত্রা কম থাকলে নিজে নিজে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করা উচিত।
তবে খাবার বা সাপ্লিমেন্টারির চেয়ে সময়মতো নিয়ম মেনে সূর্যের আলো গ্রহণ করাই ভালো। কেননা ক্যালসিয়াম শোষণে ভিটামিন ‘ডি’ শরীরের জন্য বেশ দরকার, যা বিনা মূল্যে মেলে সূর্যের আলো থেকে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ভিটামিন ডি হাড়
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh