বছর ঘুরে আবারও সমাগত রমজানুল মোবারক। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ করে থাকেন। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমরা করোনা মোকাবেলা করে রমজান পালন করে আসছি। তবে এবার বাড়তি দুশ্চিন্তা ডায়রিয়া ও কলেরা। সম্প্রতি ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক বেড়েছে। তাই এবারের রমজান বাড়তি সতর্কতা সাথে পালন করতে হবে। সারাদিনের রোজা শেষে আমাদের পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে হবে।এজন্য মানতে হবে কিছু নিয়মাবলি ও কৌশল।
- রমজানে রোজা শেষে ইফতার দিয়ে খাবার শুরু হয়। সারাদিনের রোজা শেষে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল ও ক্ষুধার্ত। তাই এ খাবারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসময় অতিরিক্ত ভাঁজা-পোড়া জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। এসময় আর একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো একসাথে বেশি খাবার না খেয়ে পুরো খাবার ভাগ করে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
- অনেকের রমজানের পর ওজন বৃদ্ধি পায় আবার কারও কারও ওজন হ্রাস পায়। এ দুইটাই সত্যি এবং এটি নির্ভর করে রমজানের এক মাসের খাদ্যাভাস ও শারীরিক পরিশ্রমের উপর। অতিরিক্ত তেল,ভাজা-পোড়া,বুট, ছোলা খেলে ওজন অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার শরীর দুর্বল ও স্বাস্থ্যহানী করে থাকে।
- ইফতারের পর রাতের খাবার হিসেবে খেতে পারেন বিভিন্ন পুষ্টিকর সালাদ। যেমন- প্রোটিন সালাদ, ছোলা সালাদ ইত্যাদি।
- অনেকে সেহেরিতে হালকা খাবার বা কিছুই খায় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল। এসময় ভালো শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যা পরবর্তী ১২-১৪ ঘন্টা শরীরকে কার্যক্ষম রাখবে।
জেনে নিন বাড়তি কিছু কৌশল-
- ইফতারে বাড়তি চিনি যুক্ত শরবত পান না করে যে কোন মৌসুমী ফলের জুস খান। যেমন- লেবু, তরমুজ, আম ইত্যাদি। তবে এগুলো চিনি ছাড়া ও পরিমিত হতে হবে।
- রমজানে অনেকে ভাবে দুধ কখন খাবো বা খেতে ইচ্ছে করে না। তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে দই। ইফতারে দই, দই-চিড়া, দই-সালাত বা লাচ্ছি অনেক উপকারী এবং খেতেও সুস্বাদু। আর এটি টক দই হলে তো কথাই নেই।
- রোজায় গুরুত্বপূর্ণ হলো পানি। অনেকের ডিহাইড্রেশন হয় তাই ইফতারে প্রচুর পানি পান করে। এতে একটা শারীরিক অস্বস্তি ও খারাপ লাগা তৈরী হয়। তাই ইফতারে একসাথে বেশি পানি পান করে বিরত থাকতে হবে। সময় নিয়ে একটু একটু খান। যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি রোগের ঝুঁকি নেই তারা একটু পর পর ফল বা ফলের জুস খেতে পারেন।
- রমজানে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবজি ও ফলমূল, প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন খেতে হবে।
- সবাই নিয়ম মেনে চলুন। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন।
লেখক : আমেনা জান্নাত নিপা
পুষ্টিবিদ, ল্যাব জোন স্পেশালাইজড হসপিটাল, সাভার-ঢাকা।