ক্যান্সার চিকিৎসায় এগিয়ে আসছে ‘কণা’ পদার্থবিদ্যা

ইউরোপের বিজ্ঞান ল্যাব সার্নের (ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)-এর গবেষকরা, যারা নিয়মিতভাবে কণা পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া নিয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ করেন, তারাও তাদের নৈপুণ্য প্রয়োগ করে ক্যান্সার চিকিৎসার বাধা অতিক্রম করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এখানকার পদার্থবিদরা ক্যান্সার রেডিয়েশন থেরাপির নাগাল প্রসারিত করার উপায়গুলোর সন্ধানে দৈত্যাকার কণা ত্বরণকারীর সাথে কাজ করছেন এবং টিউমারগুলোর গভীরে সুনির্দিষ্ট আঘাত হানার উপায় খুঁজছেন।

সার্নের লাইনার ইলেকট্রন এক্সিলেটর ফর রিসার্চ (সিএলইএআর) নামে ল্যাবের গবেষণা সমন্বয়কারী রবার্তো করসিনি বলেছেন, গবেষণাগারে ইলেকট্রনের খুব উচ্চ শক্তির রশ্মি তৈরি করার হয়। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কণা থাকে- যা ক্যান্সারের কোষকে আরো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।

করিসিনি বলেন, তারা ‘শরীরের গভীরে বসে থাকা টিউমারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিগুলিতে ইলেকট্রনকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন। যা ১০০ মিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্টের উপরে’ (এমইভি)। 

ধারণাটি হল এই অতি উচ্চশক্তির ইলেকট্রনগুলো (ভিএইচইই) ফ্ল্যাশ নামক একটি নতুন এবং প্রতিশ্রুতিশীল চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে একত্রে ব্যবহার করা যাবে।

এই পদ্ধতিটি বর্তমান পদ্ধতির মতো মিনিটের পরিবর্তে কয়েকশ’ মিলিসেকেন্ডে বিকিরণ ডোজ সরবরাহ করে।

এটিতে ক্যানসার টিউমারের উপর একই ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখানো হয়েছে। তবে আশপাশের সুস্থ টিস্যুর অনেক কম ক্ষতি করে।

সার্নের তথ্য কর্মকর্তা বেনজামিন ফিচ বলেন, প্রথাগত রেডিও থেরাপি ‘টিউমার কোষের সমান্তরাল সুস্থ কোষগুলোর ক্ষতি করে।’ কিন্তু তাদের এই সংক্ষিপ্ত, তীব্র ফ্ল্যাশ চিকিৎসা সঠিকভাবে ক্যানসার কোষগুলো ধ্বংস করে এবং সুস্থ কোষগুলোর ওপর ক্ষতিকর  প্রভাব হ্রাস করে।’

ফ্লাস প্রথম ২০১৮ সালে রোগীদের উপর ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে উপলব্ধ মেডিকেল লিনিয়ার এক্সিলারেটর, লিন্যাকের উপর ভিত্তি করে প্রায় ৬-১০ এমইভি এর কম-শক্তি ইলেক্ট্রন বিম প্রদান করে।

যদিও এত কম শক্তিতে বীমগুলি গভীরভাবে প্রবেশ করতে পারে না। যার অর্থ অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ত্বকের ক্যান্সারের সাথে পাওয়া সুপারফিশিয়াল টিউমারগুলিতে ব্যবহৃত হয়েছে।

কিন্তু সার্ন পদার্থবিদরা এখন ফ্ল্যাশ ডেলিভারির জন্য একটি মেশিন তৈরি করতে লউসেন ইউনিভার্সিটি হসপিটাল (সিএইচইউভি) এর সাথে সহযোগিতা করছেন। যা ১০০ থেকে ২০০ এমইভি পর্যন্ত ইলেকট্রনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এটি আরও অনেক কঠিন-নাগালের টিউমারের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

সার্জারি, কেমোথেরাপি বা প্রথাগত রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করে শরীরের গভীরে থাকা ক্যান্সারের টিউমারগুলিকে নির্মূল করা যায় না। সে ক্ষেত্রে আমরা এই টিউমার লক্ষ্য করে ফ্লাস তৈরি করছি।

সিএইচইউভি-এর রেডিওলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর জিন বোরহিস বলেন, ‘যে সব ক্যান্সার এই মুহূর্তে নিরাময় করা যাচ্ছে না সেগুলোই আমাদের গবেষণার লক্ষ্য।’

সূত্র: বাসস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //