‘না করলে সময় ক্ষেপন, স্ট্রোক হলেও বাঁচবে জীবন’

বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। প্রতি ছয় সেকেন্ডে বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে কেউ না কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছেন। প্রতিবছর এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালন করা হয়। আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় 'না করলে সময় ক্ষেপন, স্ট্রোক হলেও বাঁচবে জীবন'। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি উদাযাপন করা হয়। এ বছরেও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি চারজনের একজন জীবনে অন্তত একবার স্ট্রোকের কবলে পড়ে। প্রতি বছর অন্তত দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোক করে থাকেন। যাদের মধ্যে অন্তত ৬০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।

সরাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ স্ট্রোক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে মারা গেছেন ৮৫ হাজার ৩৬০ জন, যা আগের বছর (২০১৯ সাল) ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৫০২। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ।

স্ট্রোক কী?

একটি স্ট্রোক হল মস্তিষ্ক উপর আক্রমণ। এটা ঘটে যখন আপনার মস্তিষ্ক একটি অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। একটি ব্লকেজের দ্বারা (ইসকেমিক স্ট্রোক) অথবা রক্তপাতের দ্বারা (হিমোরেজিক স্ট্রোক) এটি সংঘটিত হয়। এমন ঘটলে, মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না এবং মস্তিষ্কের কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করবে এবং মরে যায়। একজন ব্যাক্তি যা করেন, অনুভব করেন, ভাবেন ও মনে রাখেন যেহেতু মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মস্তিষ্কের ক্ষতি হলে এই যোগ্যতাগুলোর ক্ষতি হয়। এতে ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

স্ট্রোকের প্রধান কারণ:

১. অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ শতকরা ৫০ ভাগ স্ট্রোকের কারণ। যারা নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ এর চিকিৎসা করেন না তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৫ গুণ বেশি।

২. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।

৩. ধূমপানের বদ অভ্যাস।

৪. নিয়মিত মদ্যপানের বদ অভ্যাস।

৫. হার্টের অসুখ- রিউমেটিক ভাল্লুলার ডিজিস, অ্যারিদমিয়া।

৬. স্ট্রেস ও ডিপ্রেশনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা।

৭. দিনভর বসে কাজ করা এবং কায়িক শ্রম না করা।

৮. ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া (বাচ্চাদের ও তরুণদের স্ট্রোক এর জন্য)।

৯. রক্তে কোলেস্টেরল চর্বি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে।

১০. স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়।

১১. ওজন কমাতে হবে। এক্ষেত্রে সুষম খাবারের উপর ভরসা রাখতে হবে। দামি নয়, দেশি ও সহজলভ্য খাবার দিয়ে থালা সাজান।

১২. ডায়েটে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি ও দেশি ফল।

১৩. সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধা-ঘণ্টা করে দ্রুত হাঁটতে হবে বা ২ দিন ১৫০ মিনিট জগিং করা।

১৪. ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা।

১৫. প্রতিদিন অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা।

১৬. ব্লাড প্রেসার আর সুগার বেশি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে চলতে হবে।

১৭. নিয়মিত শরীরচর্চা করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অত্যাধিক পরিশ্রমসাধ্য বা ক্লান্তিকর না হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //