এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ঢাকার
যাত্রাবাড়ী ছিল ‘হটস্পট’। শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে মধ্যে
যে ১০টি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল, এর ছয়টিই ছিল দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে নগরীর সর্বোচ্চ সংক্রমিত ১৫টি এলাকার
মধ্যে ১১টিই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে। এর মধ্যে ১০টি স্থানে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গুর
সংক্রমণ।
আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
বর্ষাকালীন মশার জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণের চেয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এডিস মশার লার্ভা
অনেক বেশি।
উত্তর সিটিতে মশার লার্ভার উপস্থিতি
অনেক বেশি হওয়ার সঙ্গে রোগী বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ
ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে
বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণেই হয়তো এখানে ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করেছে।
ডেঙ্গুর ব্যবস্থাপনা নৌকার পানি সেচার মতো। এতে বিরতি দিলে তা পরিস্থিতি নাজুক করে
দিতে পারে। ঢাকা উত্তরে তাই ডেঙ্গু বাড়ছে।”
সম্প্রতি, ২০ সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা। প্রতিবেদনে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার ১৫টি থানার ডেঙ্গু সংক্রমণের চিত্র
তুলে ধরা হয়। বেশি সংক্রমণ হওয়া ১১টিই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের
মধ্যে পড়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে আছে পল্লবী এলাকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে উত্তরা
ও বাড্ডা এলাকা। বাকি সাত এলাকা হলো ক্যান্টনমেন্ট, দক্ষিণখান, মিরপুর, গুলশান, রামপুরা,
কাফরুল, খিলক্ষেত ও মোহাম্মদপুর।
মোহাম্মদপুর বাদ দিয়ে
উত্তর
সিটি কর্পোরেশনের ১০টি থানাতেই ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১২২ শতাংশ বেড়েছে মিরপুরে।
পল্লবীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।
এদিকে, ১৫টি বেশি সংক্রমণ এলাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের
থানাগুলো হলো যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, সবুজবাগ ও খিলগাঁও। সব কটি এলাকাতেই সংক্রমণ কমতির
দিকে।
মশা নিয়ন্ত্রণে ড্রোন ওড়ানো, গাপ্পি মাছের ব্যবহার আর
সর্বশেষ এডিস মশার লার্ভা নির্মূলে প্রথমবারের মতো ‘বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস
(বিটিআই)’ নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োগ—এমন
নানা উদ্যোগ নেয় উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
তারা বিটিআই আনতে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ
লিমিটেডকে কাজ দেয়। এ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনই ছিল না। প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরের বেস্ট
কেমিক্যাল লিমিটেড থেকে বিটিআই আনার কথা বলে আনে চীন থেকে। তবে সেই বিটিআই কার্যকর
বলে জানায় সরকারের দুটি সংস্থা।
তবে কার্যকর হলেও উত্তর সিটি কর্পোরেশন
সূত্র জানাচ্ছে, বিটিআই নিয়ে কেলেঙ্কারির পর এর ব্যবহারই বন্ধ হয়ে গেছে।
আর এর ফলে, সেখানেই ব্যাপক হারে বেড়েছে মশার লার্ভা। আগস্ট মাসের শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
বর্ষা জরিপে উত্তর সিটিতে মশার লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো
‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে
ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বাড়বে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৭৫ শতাংশ এলাকায় এডিস
মশার লার্ভার ঘনত্ব বা বিআই ২০ শতাংশের বেশি। দক্ষিণ সিটির ১৯ ভাগ এলাকায় বিআইয়ের পরিমাণ
২০-এর বেশি।
এদিকে, এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে ব্রাজিলকে পেছনে
ফেলে বেশি মৃত্যু এখন বাংলাদেশে। এছাড়া, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকার তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের
সংখ্যায় এগিয়ে আছে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো। সব মিলিয়ে ঢাকার বাইরে ১৫ কোটি মানুষ ঝুঁকিতে
আছে ডেঙ্গুর।
তবে, আশার আলো জাগাচ্ছে ডেঙ্গু টিকা। সম্প্রতি দেশে
প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের
ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা বাংলাদেশে এই
টিকার পরীক্ষা চালান।
এর আগে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে
সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ১৮২ জনের।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ডেঙ্গু ডেঙ্গুর প্রকোপ এডিস মশা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh