তিন বছরে বেড়েছে ৩২ শতাংশ

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিকের (ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী) ব্যবহার। গত তিন বছরে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে ৩১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অপব্যবহারে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু। বিশ্বে প্রতিবছর ২২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে মারা যায়। ২০১৯ সালে বিশ্বে এ কারণে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের একমাত্র কারণ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু। এভাবে চলতে থাকলে মানবজাতি বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। 

আজ রবিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘পাঠ্যপুস্তকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তার এসব কথা বলেন। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে ২০১৪ সালে প্রতি ১ হাজার জনে দৈনিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছিল ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ; ২০১৬ সালে ব্যবহারের হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ১১ শতাংশে। তবে ২০১৭ সালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার কিছুটা কমে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে এটি আরও কমে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ নামলেও ২০১৯ সালে এটি ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ২০২০ সালে বেড়ে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে পৌঁছায়। ২০২১ সালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার অস্বাভাবিক বেড়ে ৫২ শতাংশে পৌঁছে।

অধ্যাপক সায়েদুর আরও বলেন, এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে শিক্ষার্থীদের জানানো বেশি কার্যকর। ক্ষুদ্র পরিসরের একটি প্রশিক্ষণে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সফলতা এসেছে ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে সেবা দানকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সফলতা পাওয়া গেছে মাত্র ৬ শতাংশ এবং সাধারণ মানুষদের প্রশিক্ষণের কার্যকর ছিল ১২ শতাংশ।

ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ চিনতে পারে সে জন্য ওষুধের পাতায় লাল রং ব্যবহারের নিয়ম করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পাতায়ই লাল রং ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানার আইন করা হয়েছে। শিক্ষা ক্রমে অ্যান্টিবায়োটিক রেমিট্যান্স বিষয়ে পাঠ যুক্ত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাব। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, হাইজিন ইত্যাদি মাতো ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক সংক্রামক-অসংক্রামক রোগ মোকাবিলা করতে পেরেছি। এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেমিট্যান্স ভাবাচ্ছে। এ নিয়ে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। পাঠ্যপুস্তকে এর অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা, আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন, আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হাসান হাবিব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //