১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

কেমন হবে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস হলে অনেকেই ভাবেন এখন থেকে তার সব খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। পছন্দের অনেক খাবার আর খেতে পারবেন না। এ দুশ্চিন্তায় অনেকে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভুল ধারণা থেকেই এমনটা হয়। প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ হলেও একে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও কর্মকম জীবন যাপন করা সম্ভব।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জীবনযাপন এবং খাদ্যাভাসে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং খাদ্য তালিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার। কেননা এটি এমন একটি রোগ যা আমাদের খাদ্য অভ্যাসের সাথে গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং কিছু ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য। ডায়াবেটিস হলে সব খাওয়া যাবে তবে পরিমিতভাবে নিয়ম মেনে। শর্করা জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগী রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে তাই সকল  শর্করা জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমন- চিনি, মিষ্টি, বেশি সাদা চালের ভাত, ময়দার রুটি, পাউরুটি, সাদা আলু বা মিল্ক ব্রেড এই জাতীয় খাবারগুলো আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এই জাতীয় সরল শর্করার তৈরি খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজন খাদ্যতালিকায় শর্করার জটিল সমন্বয় এবং খাদ্যের ছয়টি উপাদানের সমন্বয়ে একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের তালিকা। প্রয়োজন নিয়ম শৃঙ্খলা জীবনযাপন যেমন- সময়মতো খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে লাল চালের ভাত রুটি বাদাম বুট এবং কলাইজাতীয় খাদ্য। এগুলো রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। ডায়াবেটিক রোগীদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় যেসব খাদ্য উপাদান রাখা খুবই জরুরি-

  • টক দই : ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সকালের নাস্তায় টক দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টক দই এমন একটি প্রোবায়োটিক যা আমাদের খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সমন্বয়ের মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করতে সাহায্য করে। এই প্রোবায়টিক সমৃদ্ধ টক দই সাথে যদি আমরা জটিল শর্করা হিসেবে চিড়া কিংবা ওটস এবং এর সাথে যদি একটু বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সি যুক্ত ফল। এছাড়া একটি চাপা কলা রাখা যায় তাহলে পূর্ণাঙ্গ নাস্তা হতে পারে। টক দই ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও পূরণ করে খুব সহজে।
  • ডিম: দৈনিক খাদ্য তালিকায় বিশেষ করে সকালে নাস্তায় রাখতে হবে একটি কুসুমসহ ডিম। কেননা প্রায় ৯০% ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে ডিমের কুসুম থেকে পেতে পারি ভিটামিন ডি ছাড়াও এলবুমিন এবং ক্যালসিয়াম যা আমাদের একজন ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক ও কর্মক্ষমতা থাকতে সাহায্য করে।

জটিল শর্করা বা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট :
ডায়েটরি ফাইবার যুক্ত কার্বোহাইড্রেট ডায়াবেটিক রোগীদের ব্লাড সুগার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। নো জিআই যুক্ত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের রোগীদের ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে খুব সহজে। তাই ডায়াবেটি সকালের নাস্তায় সাদা আটার রুটির পরিবর্তে লাল একটা রুটি কিংবা গম ভাঙ্গানো রুটি, চিরা দই কিংবা ওটস দুধ বা ওটস মিল।  

  • ভিটামিন সি যুক্ত ফল: সকালের নাস্তায় ফল থাকা খুব জরুরী। তবে খালি পেটে না। ফল শরীরে ক্যালরি অভাব পূরণ করে কোন ক্ষতি ছাড়াই বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত সাইট্রাস ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমরা জানি যারা টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন তাদের কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা এমনি কম থাকে। একটি ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়া হয় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সকালের নাস্তায় একটি চাপা কলা বা ছোট কলা কমলা মাল্টা শরিফা আত বুড়া আনারস জাতীয় ভিটামিন সি যুক্ত ফল ফল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
  • বাদাম: বাদাম আমাদের শরীরে ফ্যাট তৈরি করে এবং খারাপ মানের কোলেস্টেরল দূর করে। দীর্ঘদিন টাইপ টু ডায়াবেটিসে ঢুকে অনেকেই  ভুলে যাওয়া রোগ ডিমেনশিয়া রোগে ভুগতে থাকেন। বাদাম বিশেষ করে আখরোট কিংবা ওয়াল নাট, কাজু এবং কাঠবাদাম এই জাতীয় বাদামগুলো ডিমেন্সিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভালো মানের ফ্যাট পেতে হলে রাস্তায় কিংবা মিড মর্নিং স্নেক্স এ এক মুঠ বাদাম রাখতে ভুল করবেন না।

এছাড়া দৈনিক খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নানান রঙ্গের সবজি এবং মানে প্রাণিজ প্রোটিন বা ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন এবং উদ্ভিদজাত প্রোটিন বা সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন রাখতে হবে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় মাছ, মুরগি কিংবা ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার রাখা উচিত।
এর সাথে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।
 
সবশেষে বলতে চাই অযথা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে শারীরিক অবস্থা আরো জটিল না করে, সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করুন।

লেখক: পুষ্টিবিদ সামসুন নাহার স্মৃতি, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : ডায়াবেটিস

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //