এই শীতে গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও করণীয়

ঋতু বদলের এই সময়ে শীতকালে গর্ভবতী মায়েদের তো অতিরিক্ত যত্ন নিতেই হয়। তা ছাড়া এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের দরকার হয় বাড়তি সুরক্ষার। নইলে অল্পতেই সর্দি-কাশির কবলে পড়ে গর্ভের সন্তানটিও অসুস্থ হয়ে পড়ে। জন্ম থেকেই ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে। এ সময় গর্ভবতীদের সুস্থ থাকা জরুরি। শীতের প্রভাবে মা ও শিশুর যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সেজন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

সাধারণত শীতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। প্রস্তুতি মায়েরা এমন একটি বিশেষ অবস্থায় থাকে যে তাদেরকে তাই একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। যেখানে সময় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে নিউমোনিয়া হতে পারে মায়ের। যাদের হাঁপানি সমস্যা আছে তাদের হাঁপানির টান আরো বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই সবার ভিতর অলসতা আসে।

সুষম খাবার খেতে হবে : গর্ভকালীন মায়েদের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপরও। এ সময় মা যদি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হয় তবে সন্তানও সুস্থ থাকবে এবং প্রসবকালীন জটিলতা কমে যাবে ৯৫ ভাগ। শীতকালে বাজারে শিম, মুলা গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক সুলভমূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। গর্ভবতী মায়েদের ভাত কম খেয়ে এ খাবারগুলো বেশি বেশি খাওয়া উচিত। আলু একটু কম খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। ফলের মধ্যে পেয়ারা, বরই, কদবেল, জলপাই, কামরাঙ্গা, কমলালেবু, আনার একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া দরকার। এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস, লোহা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ বি ও সি।

পরিমিত পানি পান করতে হবে : শীতকালে যেহেতু ঘাম কম হয় এবং পিপাসা কম পায় তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা এ সময় পানি কম খাই। গর্ভবতীদের এ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা ও প্রিটাম লেবারের মতো জটিলতা কমবে।

ত্বকের যত্ন নিতে হবে : গোসল করার সময় গায়ে অনেকক্ষণ পানি ঢালবেন না। কিংবা অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের শুষ্কতা আরও বেড়ে যায়। চেষ্টা করবেন চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করতে এবং উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করতে। গোসলের সময় গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করুন। গোসলের পর ত্বক ভেজা থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হাতে পায়ে মুখে ও শরীরে মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে গ্লিসারিন কিংবা অলিভ অয়েল নিয়মিত মাখতে পারেন। ঠোঁটে ভেসলিন ব্যবহার করবেন। ঠোঁটের উপরিভাগের পাতলা শুষ্ক ত্বক কখনো টেনে তোলার চেষ্টা করবেন না, তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। নিয়মিত মেসেজ করতে পারেন, এতে রক্ত চলাচল ভালো থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী।

আরামদায়ক গরম পোশাক পরা ভালো : শীতে সোয়েটার কিংবা গরম কাপড় পরিধান করুন। এমন কিছু পরবেন না যাতে পেটের ওপর চাপ পড়ে এবং চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। লম্বা ও সামনের দিকে বোতাম আছে এমন সোয়েটারগুলো এ সময় গর্ভবতী মায়েদের আরাম দিতে পারে। শীতের কাপড়ের সঙ্গে জুতার দিকেও নজর রাখতে হবে। পা থেকে ঠান্ডা লেগে মা এবং সন্তানের সমস্যা হতে পারে। পা ঢাকা জুতা এবং ঘরে-বাইরে মোজা পরে থাকবেন।

সর্দি কাশিতে নিরাময়ের ব্যবস্থা নিন : অনেক গর্ভবতীরা সন্তানের ক্ষতি হবে ভেবে সর্দি কাশিতে ওষুধ খেতে চান না। সর্দি কাশি যদি দুই তিন দিনের বেশি থাকে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। এসব সর্দি কাশি সংক্রমণ এবং জীবাণুবাহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় এসব থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এসময় গর্ভকালীন অবস্থায় নিরাপদ ওষুধ খেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি মায়ের ঠান্ডার সমস্যা আগে থেকেই থাকে তবে ঠান্ডা পানি ব্যবহার এবং ঠান্ডা কিছু খাওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।

ব্যায়াম করুন: শীতকালে আলসেমি ভর করে বলে অনেকে ব্যায়াম করতে চান না, লেপের মধ্যে শুয়ে বসে দিন কাটিয়ে দেন। কিন্তু এটা একেবারেই ঠিক নয়। সকালে বা বিকালে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। বেডিং টেকনিক ফলো করুন। এটা প্রসব বেদনা যখন উঠবে তখন কাজে দিবে। মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন করতে হবে।

লেখক : ডা. হাসনা হোসেন আখি
ফার্টিলিটি কনসাল্টেন্ট ও গাইনোকোলজিস্ট,
হার্টবিট ফার্টিলিটি ক্লিনিক, গাজি টাওয়ার, গ্রীন রোড, ঢাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //