ব্যাচেলরদের খাদ্যাভাস যেমন হওয়া জরুরি

লেখাপড়ার জন্য কিংবা কাজের ক্ষেত্রের জন্য পরিবার থেকে দূরে থাকলে অথবা জীবন-জীবিকায় থাকা অনেকেই পরিবার ছেড়ে বসবাস করায়  অধিকাংশই ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড গ্রহণ করার ফলে ওজানাধিক্যে ভুগে থাকেন। অনেকে বাধ্য হয়ে হোটেলের খাবার খেয়ে গ্যাস্ট্রিক, আলসার কিংবা বদহজমের মতো রোগেও ভুগে থাকে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছাত্রদের লেখাপড়ায় যেমন ব্যাঘাত ঘটতে পারে, তেমনি কর্মজীবীদের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে তারা শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। তাই ব্যাচেলরদের সুস্থ থাকলে চাই সঠিক খাদ্যাভাস।

চাকরিজীবীদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়। অনেক সময় সকালে তাড়াহুড়ার কারণে সঠিক নাশতা খাওয়া হয় না। আবার অফিসে নানা কাজে খাওয়ার সময় পেরিয়ে যায়। এতে পুষ্টির ঘাটতি হয়, ক্লান্তি বোধ হয়। মেজাজ খিটখিটে থাকে। আবার বাইরের কেনা খাবার খেলে ওজন বেড়ে যায়। নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

এতে ওজন বৃদ্ধি, অ্যাসিডিটি বা আলসার, কম ঘুম, নানা শারীরিক অসুস্থতা যেমন—ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়ের মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে, যত কষ্টই হোক বাড়ি থেকে বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে যাওয়ার। সেক্ষেত্রে, চাকরিজীবীরা কীভাবে সুস্থ একটি খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখবেন?

ব্রেকফাস্ট কেমন হবে : ব্যাচেলরদের রুটি বানানো একটা বিশাল ব্যাপার, চটজলদি হিসাবে চিড়া-দই অথবা ওটস দুধ-কলা, কিংবা ছাতু ও ফলের ফলাহার বা সাবুদানার ফ্রুট কাস্টার্ড যদি ব্রেকফাস্টে থাকে কিংবা কনফ্লেক্ট দুধ-কলা, তাহলে কিন্তু পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং এর সঙ্গে ক্যালরির চাহিদাও পূরণ হবে।

লাঞ্চের খাদ্যতালিকা : দুপুরে থাকতে পারে ওটস খিচুড়ি কিংবা রুটি-ডাল-সবজি এবং এর সঙ্গে একটি ডিম সিদ্ধ বা যে কোনো একটা প্রোটিন, সেটা মুরগি হতে পারে, মাছও হতে পারে। বিকালের নাস্তা বিকালে অনেকে আছেন হয়তো বা কর্মক্ষেত্রে থাকেন, কিংবা কোচিংয়ে কিংবা ক্লাসেও থাকতে পারেন, হয়তো বা লম্বা একটা ব্রেক পাচ্ছেন না, পাঁচ দশ মিনিটে ব্রেক পাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে একটি খেজুর এবং অল্প কিছু বাদাম খেয়ে পানি খেতে পারেন।

রাতের খাবার : রাতের বেলায় এসে সম্ভব হলে ভাত, এক কাপ সবজি এবং এর সঙ্গে এক কাপ ডাল এবং মাছ বা মুরগি রাখতে পারেন; তারা ভাতের পরিবর্তে রাখতে পারেন ব্রাউন ব্রেড অথবা রুটি। হোম ডেলিভারি কিছু সার্ভিস আছে, যারা ঘরে তৈরি রুটি সার্ভ করে থাকেন। ফ্রোজেন রুটি কিছুদিনের জন্য কিনতে পারেন, রুটি খাওয়া হলো, কার্বোহাইড্রেট দেওয়া হলো, এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল হিসাবে সবজি গ্রহণ করবেন। দুধজাত খাবার ডেইরি প্রোডাক্ট পারে অথবা দই হিসাবে আপনি খেতে পারেন। ডেইরি প্রোডাক্ট ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করবে এবং এর সঙ্গে হাড় গঠনে সাহায্য করবে। প্রোবায়োটিক হিসাবে টকদইয়ের বিকল্প নেই।

ব্যাচেলরদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার আরও কিছু পরামর্শ-
সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ চা চামচ চিয়া সিড ভিজেয়ে এক গ্লাস পানি খেতে পারেন।

সকালের নাস্তা : সাতটা থেকে আটটার মধ্যে সকালের নাস্তা খেয়ে নিতে হবে। এ আয়োজনে থাকতে পারে ওটস ৪ টেবিল চামচ, ১ কাপ দুধ, ১টি কলা বা ১টা খেজুর, ১টি ডিম সিদ্ধ। এরপর সকাল দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে যে কোনো ১টি ফল ও অল্প পরিমাণে মিক্সড বাদাম খাওয়া যেতে পারে।

দুপুরের খাবার : একটা থেকে দুইটার মধ্যে দুপুরের খাবার খতে হবে। এতে থাকতে পারে ভাত ১ কাপ/রুটি ২টি/ ব্রাউন ব্রেড ২টি, মিক্সড সবজি ১ কাপ/ডাল, সবজি ১ কাপ, মাছ/মুরগি ২ পিছ। মাছ/মুরগি সম্ভব না হলে ১টি ডিম খেতে পারেন। আরও থাকতে পারে শসা, লেবু ১ টুকরো।

বিকালে নাস্তা : পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে বিকালের নাস্তা খেতে হবে। এতে থাকবে ১ কাপ রঙ চা, ১টি বিস্কুট, যে কোনো ১টি ফল অথবা ১টি খেজুর এবং অল্প পরিমাণে বাদাম খেতে পারেন।

রাতের খাবার : রাতের খাবারে ওটস চিকেন খিচুড়ি ১ কাপ অথবা রুটি ২টি/ভাত ১ কাপ, ডাল-সবজি ১ কাপ

মাছ/মাংস ২ পিস অথবা সবজি ডিম খিচুড়ি রাখলে ভালো হয়। এছাড়া রাতে শোয়ার আগে ১ কাপ লো ফ্যাট দুধ বা ১ কাপ টকদই খেতে নেবেন।

তবে যারা রাত জেগে লেখাপড়া কিংবা কাজ করতে হয় তারা রাতের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট কিংবা ভাজা পোড়া খাবার না খেয়ে ফ্রুট সালাদ কিংবা সালাদ কিংবা একটু স্যুপ অথবা বাদাম এবং খেজুর খেতে পারেন। স্টুডেন্ট কিংবা কর্মজীবী মানুষ সবাই কিছু ফল, দুধ এবং বাদাম রাখতে পারেন, এতে করে ক্ষুদা মেটানোর পাশাপাশি ক্যালরির চাহিদাও পূরণ হবে খুব সহজে।

লেখক : পুষ্টিবিদ সামসুন নাহার স্মৃতি, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //