নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম
অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত চাপের কারণে রোগীদের সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। ধারণ ক্ষমতার চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ রোগী সেবা নিয়ে আসে এই হাসপাতালে। ফলে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনদের ওপর তৈরি হচ্ছে ব্যাপক চাপ।
হাসপাতালে ভর্তির পরই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত খাদ্য ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন রোগী ও তার সাথে আসা স্বজনরা। আসন সংকটের কারণে অনেক রোগীকে জনাকীর্ণ করিডোর ও ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়া এক রোগী করিডোরে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু বিছানা পাননি তিনি। তার ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রয়োজনের সময় নার্সদের পাওয়া যায় না, এমনকি ডাক্তারদেরও খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ঢামেকে রয়েছে ওষুধের অভার। প্রেসক্রাইব করা ওষুধ পাওয়া যায় না হাসপাতালের ফার্মেসিতে। ওষুধের অভাবে অনেক রোগী বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান ক্রমবর্ধমান সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, চলমান এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছেন।
হাসপাতালটিতে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে পরিচ্ছন্নতার মান বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। তবে অপরিচ্ছন্নতার জন্য লোকজনের আচরণও দায়ী বলে মনে করেন হাসপাতালের পরিচালক। তিনি বলেন, শৌচাগারগুলোর পাইপলাইনে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় বস্তু আটকে যায় এবং পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া প্রতিটি শৌচাগার প্রায় ১০ জন লোক ব্যবহার করেন, তাই সঠিক স্যানিটেশন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
হাসপাতালের রান্নাঘরেও দেখা গেছে নানা রকম সমস্যা। যেখানে রান্না করা হচ্ছে, তার আশপাশে বর্জ্য জমে রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যগুলো ঢেকে রাখা হয়নি। এগুলো রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছে।
পরিচালকের মতে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, জনবল না বাড়ালে এরকম অব্যবস্থাপনা চলতেই থাকবে। প্রতিদিনের জন্য রোগীপ্রতি মাত্র ১৫০ টাকা খাদ্য বাজেট যথেষ্ট নয় বলেও তিনি জানান। একই সঙ্গে খাবারের মান উন্নয়নের জন্য এটি ২০০ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেন।
বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, রোগীদের জন্য হুইলচেয়ার সহায়তা মৌলিক সেবার মধ্যেই পড়ে। অথচ এর জন্য হাসপাতালের কর্মচারীদের ৫০-১০০ টাকা পরিমাণ বকশিস দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওয়ার্ড সহকারী বলেন, রোগীরা যদি আমাদের কিছু দেন, তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত খরচ মেটাতে সহায়ক হয়।
হাসপাতালের পরিচালক এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কাজে জড়িতদের আমরা বরখাস্ত করেছি, তবে পুরোপুরি এই প্রথা নির্মূল করা এখনো চ্যালেঞ্জিং।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh