অতুলনীয়া অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে ছোট্ট একটা মেয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? উত্তরে সে বলেছিল আমি ভ্যাম্পায়ার হতে চাই। প্রশ্নকর্তা উত্তরটা শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিলেন। তিনি এটাও নিশ্চয় মনে করেছিলেন, এমন উত্তর দেওয়া শিশুকে আর যা-ই হোক সাধারণদের কাতারে ফেলা যায় না। অবশ্য সে আট-দশজন শিশুর মতো কখনো ছিলও না।

আর সেজন্যই তার অতুলনীয় সৌন্দর্য ও মেধাশক্তির বদৌলতে হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রীদের তালিকায় গৌরব এবং দাপটের সঙ্গে লিখিয়ে নিয়েছেন নিজের নামটি। তিনি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গেল ৪৫তম জন্মদিন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলসে জন্মগ্রহণ করা জোলির যশ, খ্যাতি, সাফল্য, ভালোবাসা ও সম্মান সবই এসে ধরা দিয়েছে। ইহজগতে একজন মানুষ যা কিছু পেয়ে থাকেন কোনোকিছুই হয়তো তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে নেই। 



অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বাবা ছিলেন তৎকালীর হলিউড তারকা জোনাথান ভিনসেট ভইট এবং মা টিভি অভিনেত্রী মার্শেলিন বার্টান্ড। জোলির বয়স যখন এক বছর তখনই তার বাবা ও মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ঠিক সেসময় থেকেই জোলি একা হয়ে যান। তার অভিনয়জীবনের সূচনা মূলত নব্বই দশকের শুরুর দিকে। তার আগে পাঁচ বছর বয়সে ‘লুকিং টু গেট আউট’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে রুপালি পর্দায় প্রথমবারের মতো উপস্থিত হয়েছিলেন জোলি। সহ-শিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন তার বাবাকে। এরপর ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাইবর্গ টু মুভিটিতে অর্ধ রোবট ও অর্ধ মানবীর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই জোলি প্রথমবারের মতো মূল নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। মুভিটি ফ্লপ হয়। 

আবারো বিরতি। ১৯৯৫ সালে উইদাউট এভিডেন্স সিনেমায় পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে হলিউডে পুনরায় ফিরে আসা। একই বছর হ্যাকার মুভিতে অসামান্য অভিনয় প্রতিভা দেখান। ফলে মুভিটি তেমন ব্যবসাসফল না হলেও, জোলি হয়ে উঠেছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো খ্যাতনামা পত্রিকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এরপর একে একে গ্যাংস্টার ফিল্ম ‘হেল’স কিচেন’, রোমান্টিক-কমেডি ড্রামা ফিল্ম ‘প্লেয়িং বাই হার্ট’, কমেডি ড্রামা ফিল্ম ‘পুশিং থিন’ ইত্যাদিতে অভিনয় করে নিজেকে ধীরে ধীরে আরও প্রস্ফুটিত করে তুলছিলেন। জোলির খ্যাতির ডালপালা বিশ্বজুড়ে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে তার ‘লারা ক্রফট: টম্ব রেইডার’ ছবির মাধ্যমে। তখন প্রতিটি ছবির জন্য ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক নিতে শুরু করার মধ্য দিয়ে জোলি নিজের নাম হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীদের খাতায় লিখিয়ে নিয়েছিলেন। 


শুধু অভিনেত্রী নয়, নির্মাতা হিসেবেও জোলি অনেককেই ছাড়িয়ে গেছেন। ‘আ প্লেস ইন টাইম’ নামক ডকুমেন্টারি নির্মাণের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো পরিচালকের সারিতে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। এর প্রায় বছর চারেক পর ‘ইন দ্য ল্যান্ড অব ব্লাড অ্যান্ড হানি’ নামক বসনিয়ার যুদ্ধভিত্তিক প্লটের ওপর গড়ে ওঠা প্রেমকাহিনীনির্ভর সিনেমা দিয়ে পরিচালক বেশে অভিষেক ঘটান। 

অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক এই পরিচয়গুলো ছাপিয়ে মানব কল্যাণকর কাজে অতুলনীয় অবদানের সম্মানার্থে তিনি নানা সময়ে বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ও খেতাবের অধিকারী হয়েছেন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। 


ব্যক্তিজীবনে জোলি মোট তিনবার বিয়ে করেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ‘হ্যাকারস’ সিনেমার সহ-অভিনেতা জনি লি মিলারের সঙ্গে শুটিং স্পটে রোমান্সে জড়িয়ে যাবার এক বছর পর তাকেই প্রথম স্বামী হিসেবে বরণ করে নেন জোলি। যদিও সে বিয়ে মাত্র তিন বছর টিকেছিল। ২০০০ সালে ‘পুশিং থিন’ এর সহ-শিল্পী বিলি বব থর্নটনকে বিয়ে করেন। এই সংসারও তার টেকে তিন বছর। এরপর ২০০৪ সালে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে জোলি ও পিট পরস্পরের কাছাকাছি আসতে শুরু করেন। এবং সে সময় তারা ছিলেন সুপারহিট জুটি।

প্রায় ৬ বছর হলিউডের সেরা আকর্ষণীয় জুটি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসা ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ নিজেদের বাগদান পর্ব ২০১২ সালের এপ্রিলে সেরে ফেলেন। এর ২ বছর পর হলিউডের ইতিহাসের বহুল প্রতীক্ষিত সেই বিশেষ দিনটির আগমন ঘটে। সে সময় অনেকেই মনে করেছিলেন, এ জুটির বৈবাহিক সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকবে; কিন্তু না। বিয়ের ২ বছর পর সম্পর্কের অবনতি ঘটার কারণে জোলি আদালতে পিটকে তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।


‘অ্যাঞ্জেলিনা জোলি’র জীবনবৃত্তান্ত ঘাটলে একটি কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, একজন মানুষ চাইলেই নিজেকে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়ে, ধীরে ধীরে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //