লাইফ ইজ বিউটিফুল : নির্মমতার মধ্যেও সুন্দর জীবনের গল্প

সবসময়ের জন্য সেরা ১৯টি ইতালিয়ান চলচ্চিত্রের একটি হলো ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’। সারাবিশ্বের চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের খুব কমজনই আছেন, যারা এই সিনেমাটি দেখেননি বা এর নাম শোনেননি। 

চলচ্চিত্রটি লেখক রুবিনো রোমিওর বই ‘ইন দ্য ইন্ড, আই বিট হিটলার’র ছায়া অবলম্বনে নির্মিত বলা যায়। কেননা চলচ্চিত্রটির নির্মাতা রোবার্তো বেনিনি রুবিনো রোমিওর লেখা এই বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই নির্মাণ করেছিলেন চলচ্চিত্রটি। ১১৬ মিনিট দীর্ঘ কমেডি ড্রামা হিসেবে উপস্থাপিত লাইফ ইজ বিউটিফুল চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের ওপর এডলফ হিটলারের নৃশংসতাকে কেন্দ্র করে। 

একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়ে যাওয়া এই সিনেমাটির শুরুতে দেখা যায় ইহুদি যুবক গুইডো কাজের খোঁজে শহরে আসে। গুইডোর চাচা শহরের একটি হোটেলের রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। সেই চাচার কাছেই ঠাঁই হয় গুইডোর। শহরে এসে গুইডো এক উচ্চ বংশীয় ক্যাথলিক সুন্দরী তরুণীর প্রেমে পড়ে। তরুণীটির নাম ডোরা। সে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। ডোরা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে গুইডো জানতে পারে স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে খুব শিগগিরই ডোরার বাগদান হতে যাচ্ছে; কিন্তু প্রেমিক গুইডো এসব খবরে ভেঙেতো পড়েই না বরং নানান ছলছুতোয় ডোরার সামনে হাজির হয় এবং বিভিন্ন হাস্য-রসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডোরার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে থাকে। গুইডোর এসব পাগলামিতে একসময় ডোরাও তার প্রেমে পড়ে যায়। এদিকে গুইডো আর ডোরার যখন মন দেওয়া-নেওয়া সম্পন্ন, ঠিক তখন ডোরার বাড়িতে বাজছে ডোরার বিয়ের সানাই; কিন্তু ক্ষ্যাপাটে প্রেমিক প্রেমিকা গুইডো ও ডোরা বিয়ের দিনই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।


ডোরা ও গুইডো দম্পতির ঘরে পুত্র জোসুয়া নামের এক পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। ছেলেকে নিয়ে ডোরা ও গুইডো দম্পতির বেশ হেসে খেলেই দিন কাটছিল। দেখতে দেখতে জোসুয়ার চতুর্থ জন্মদিন চলে আসে। মূলত সিনেমার মোচড় শুরু যেন এখান থেকেই। জোসুয়ার জন্মদিনের উৎসবের রাতেই গুইডো, জোসুয়া ও গুইডোর চাচাকে ধরে নিয়ে যায় হিটলারের নাৎসি বাহিনি। ওদিকে ডোরা তখন তার মাকে নিয়ে ফিরে এসে বাড়ির পরিবেশ দেখে বুঝতে পারে ঘটনাটি কি। এদিকে নাৎসি বাহিনীর হাতে বন্দি ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে নিয়ে যেতে যাত্রা শুরু করছে যে ট্রেন স্বামী ও সন্তানের দেখা পেতে স্বেচ্ছায় সেই ট্রেনে উঠে পড়ে ডোরা। গ্যাস চেম্বারে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। হাজার হাজার বন্দি মাথা নিচু করে সারি বেঁধে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষগুলো জীবিত হয়েও মৃত্যুর ভয়াবহতা নিয়ে বেঁচে আছে। তারা জানে না, তাদের ভবিষ্যৎ কি! 

নিশ্চিত মৃত্যু আর নাৎসিদের দুর্ব্যবহারই তাদের নিকট তখন একমাত্র সত্য। গুইডো আর তার ছেলেও রয়েছে এই দলে। গুইডো সবকিছু আঁচ করতে পারলেও চিন্তায় পড়ে ছেলেকে নিয়ে। তাই সে চায় ছোট্ট জোসুয়াকে যেন আসন্ন ভয়াবহতা ছুঁতে না পারে। এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, নাৎসিদের দুর্ব্যবহার বন্দিদের ভীত সন্ত্রস্ত চেহারা দেখে জোসুয়া যেন কিছু আন্দাজ করতে না পারে সেজন্য গুইডো তাকে বোঝায় এটি একটি খেলা। এখানে যারা আছে, তারা সবাই এই খেলায় অংশ নিতে এসেছে। সৈন্যরা কর্কশ স্বরে ক্যম্পের নিয়ম কানুন সম্বন্ধে সবাইকে বলে গেলেও গুইডো জোসুয়াকে জানায়, তারা আসলে খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানিয়ে গেল। এই খেলায় যে জিতবে তাকে পুরস্কারস্বরূপ দেওয়া হবে একটি সত্যিকারের ট্যাংক। আর জোসুয়া যদি মাকে দেখতে বায়না ধরে, ক্ষুধা লেগেছে বলে কান্নাকাটি করে তবে সে হেরে যাবে এই খেলা থেকে। তার ট্যাঙ্কটি জেতা হবে না।

এ সময় ছোট্ট বাচ্চাটি যেন বুঝতে না পারে যে তার সঙ্গে কি হতে চলেছে একজন দায়িত্ববান বাবা হিসেবে হিমশিতল সময়েও সেই চেষ্টা যেমন করতে দেখা গিয়েছে গুইডোকে পাশাপাশি একই ক্যাম্পে থেকেও প্রিয়তমা স্ত্রীকে দেখতে না পাওয়ায় গুইডো বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে খুঁজে চলে ডোরাকে।

আর এভাবেই এগিয়ে চলে সিনেমাটি। মুক্তির পরপরই বেশ সাড়া ফেলেছিল সিনেমাটি। ব্যবসায়িক দিক দিয়েও যেমন সফলতা অর্জন করে তেমনই চলচ্চিত্রটির ভাগ্যে পুরস্কারও জোটে বেশ। ১৯৯৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয় সিনেমাটি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //