ঈদে হেসে উঠুক ঘরদোর

গ্রীষ্মের রোজা কিছুটা কষ্টকরই বটে। তাই ঈদের দিনের ঘরদোর সাজানোর পরিকল্পনাটা আগেভাগেই সেরে নিলে ভালো। তাহলে রোজা রেখে প্রতিদিনের ইফতার-সেহ্রির বাড়তি কাজ সামলেও উৎসবের দিন অতিথি আপ্যায়ন করতে পারবেন মনের মতো করে। 

এমনিতেই রোজার মাসে খরচ অন্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। ঈদে পরিবার পরিজনদের জন্য কেনাকাটাও রয়েছে। তাই বাজেটের দিকে খেয়াল রেখে ঘরে যা আছে তা দিয়েই নতুন রূপে সাজিয়ে তুলুন আপনার প্রিয় আবাসস্থল। শুধু নজর রাখবেন ঘরের আকার, দেয়ালের রঙের সাথে সাজসরঞ্জাম যেন মিলে যায় এবং ঘরের আলোবাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। 

  • প্রথমেই ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিন। রোজা রেখে কাজটা করা খুব কষ্টকর বলে প্রতিদিন কিছু না কিছু গোছগাছ করুন। ফ্যানের ব্লেড, ফ্লোর টাইল্স থেকে শুরু করে ফ্রিজ-ওভেন সব পরিষ্কার করুন। 

  • নিত্যদিনের পুরনো পর্দা, কুশন কভারগুলো ব্যবহার করতে হলে ঈদের অন্তত দিন দশেক আগ থেকে ধোয়া শুরু করুন। কারণ ঝড়বাদলের ওই সময়ে রোদ না পেলে কাপড় শুকানো বেশ ঝামেলার হয়ে পড়বে। ধোয়ার পর আয়রন করে পর্দা ঝুলিয়ে দিন। কুশন কভারের ব্যবহার অত্যাবশ্যক না হলে তুলে রাখুন একবারে ঈদে ব্যবহার করবেন। 
  • আর যদি বাড়তি বিছানার চাদর, পর্দা, কুশন কভার থাকে তাহলে যেগুলো ব্যবহার করবেন সেগুলো গুছিয়ে রাখুন। এর কোনোটা নতুন করে কেনা প্রয়োজনীয় হলে তালিকায় টুকে রাখুন। 
  • সবসময় নতুন আসবাবপত্র কেনা সম্ভব নয় বলে পুরনো যা আছে তাই ঘরের এদিক-ওদিক রেখে সাজানোর পরিকল্পনা করুন। খেয়াল রাখবেন এতে যেন আলো-বাতাসের কমতি না হয়। তবে ঘরকে এভাবে নতুনরূপ দেবেন ঈদের দু’একদিন আগে, কারণ এর আগে ইফতার পার্টিতে বাড়িতে অতিথি আসবেই। আগেভাবে আসবাব সরিয়ে রাখলে ঈদ পরিকল্পনাটাই মাঠে মারা যাবে। 
  • এখন হিসাব করতে বসুন ওয়্যারড্রোব-আলমিরায় উৎসব উপলক্ষে কী কী উপকরণ তোলা আছে, কী নেই, বা বিছানার চাদর, কুশন কভার, টেবিল ম্যাট, ন্যাপকিন, শোপিস কোনটা কিনলে ভাল হয়। 

  • নতুন পর্দা, কুশন কভার, শতরঞ্জি বা বিছানার চাদর কিনতে চাইলে ঘরের আকার, আলো ও দেয়ালের রংএর সাথে মানিয়ে যায়, কিন্তু আগে কখনও ব্যবহার করেননি, তেমন কোন রঙ বাছাই করুন। এতে অতিথিদের চোখে নতুন রূপে ধরা দেবে আপনার ঘর। 
  • আবার ঘর সাজানোর উপকরণেও নতুনত্ব আনতে পারেন। আগে যদি পাট, বেত, বা কাঠের কোন শো পিস ব্যবহার না করে থাকেন এসব তুলতে পারেন ঘরের শোপিস কর্নারে। রিক্সা পেইন্টিংএর কথাও মাথায় রাখতে পারেন। নতুন কেনা সম্ভব না হলে, পুরনোগুলোই পরিষ্কার করে জায়গা বদলিয়ে রাখুন। 
  • পুরো বাড়ির পর্দা বদলানো না গেলে শুধু বসার ঘরের পর্দা বদলাতে পারেন। সোফার কাভার ও ফ্লোরের টাইল্সের সঙ্গে মিল রেখে বুটিক শপগুলো থেকে সুলভে সুন্দর পর্দা পাবেন। আবার পুরনো পর্দা, শাড়ি বা লেস দিয়েও তৈরি করে নিতে পারেন বাহারি ডিজাইনের পর্দা।
  • ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি টেবিলের কভারটা সাদা বা হালকা উজ্জ্বল রঙের করতে পারেন। এতে খাবার পরিবেশনের বাসনকোসন ও খাবার দুই-ই উজ্জ্বল দেখাবে। অ্যামব্রয়ডারি কভারও কিনতে পারেন। ডাইনিং রুমে ফ্লাওয়ার ভাসে অবশ্যই ফুল রাখবেন। শুধু গোলাপ বা রজনীগন্ধা নয়, কিনে আনতে পারেন রংবেরঙের গ্লাডিওলাস, জারভেরা, এমনকি দোলনচাঁপাও। জানালায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন অর্কিডের ঝুড়ি, রাখতে পারেন ফ্রিজের উপরেও। 

  • পছন্দসই টেবিলম্যাট, ন্যাপকিন যেন অবশ্যই থাকে। কাগজের টিস্যু পেপার বক্সটাও মুড়ে রাখতে পারেন কাপড়, পাট, কাঠ বা কাচের তৈরি নান্দনিক কোনো বক্সে। ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাসস্ট্যান্ড সরিয়ে গ্লাসগুলো পানির ফিল্টারের পাশে কাচের ট্রেতে সাজিয়ে রাখুন। অতিথিরা তাতে ভিন্নতা পাবেন।  
  • ঘরের আকার বড় হলে খাবার টেবিলের পাশে ডিনার ওয়াগনের ব্যবস্থা করা যায়। সেখানে থালাবাসন, চামচসহ খাবার সরঞ্জামাদি গুছিয়ে রাখুন। এতে ঈদের ব্যস্ততম দিনে অতিথি আপ্যায়ন সহজ তো হবেই খাবার পরিবেশনের দিকটিও নজর কাড়বে।  
  • সকলে নিচু বা ছোট সোফা, চেয়ার, শতরঞ্জিতে বসতে পারেন না, এ বিষয়টি মাথায় রেখে সকলের জন্য যথাযথ আসনের বন্দোবস্ত করলে ভালো হয়। 
  • বসার ঘরের পাশেই যদি খাবারের টেবিল থাকে তবে আড়াল রাখতে দু’ঘরের মাঝে ঝুলিয়ে দিতে পারেন নানা ধরনের জয়পুরী ঝাড় এর মাঝে মাঝে বসিয়ে দিন দু’তিনটা ভিন্ন সুরের চাইম, যার হালকা টুং টাং শব্দে ঘরময় সুরের আমেজ ছড়িয়ে থাকবে। 
  • বেসিনের পাশের টাওয়াল স্ট্যান্ডে নতুন ডিজাইনের কোনো টাওয়াল বা রঙিন গামছা ঝুলিয়ে দিন। 
  • বেডরুমের বিছানার চাদর, কুশন কভার ও পর্দার রঙে যেন মিল থাকে। খাটের পাশে দেয়ালের কাছাকাছি স্ট্যান্ড লাইট রাখতে পারেন, তা ঘরের স্নিগ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এর পাশে থাকতে পারে ফুলসহ একটা ফুলদানীও।  
  • আবার ড্রেসিং টেবিল বা ওয়্যারড্রবের উপরে ক্রিস্টালের পাত্রে বেলী বা বকুল ফুলের মালা রেখে দিতে পারেন। ঘরে প্রবেশ করেই আপনার অতিথিদের মন ভরে উঠবে অনাবিল সৌরভে। 

  • আপনার সন্তানের বয়সের দিকে লক্ষ্য রেখে তার ঘরটি সাজাবেন। সন্তানের বন্ধুদের জন্য এদিন উপহারের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন চকলেট, টফি বা রঙ পেন্সিল, গল্পের বই।   
  • এখন নজর দেওয়া যাক, রান্নাঘরের দিকে। এ ঘর থেকে খাবারের গন্ধ দূর করতে এক কাপ ভিনেগারের সঙ্গে ৮-১০টি লবঙ্গ দিয়ে চুলায় ফোটাতে থাকুন। একসময় পাত্রের পানিতে ভিনেগার কমে আসবে, এতে গন্ধও দূর হবে। বেকিং পাউডার, ভিনেগার ও লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে তা দিয়ে গ্যাস বার্নারের আশপাশ পরিষ্কার করে নিন।
  • ইফতারি তৈরির উপকরণের পাশেই রান্নাঘরে ঈদের রান্নার সব উপকরণ আগেভাগে মজুত রাখতে হয় বলে সবগুলো ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখবেন। যেন রোজার শেষে পরদিনই রান্নাঘরে সব কিছুই হাতের নাগালের কাছে পাওয়া যায়। ঈদের দিনের কাজের চাপ কমাতে কিছু বিশেষ রান্না আগেই করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এজন্য ফ্রিজে যতটা সম্ভব জায়গা খালি রাখার চেষ্টা করুন। ঈদের দিনের রান্নার জন্য বড় হাঁড়ি-পাতিলগুলো ধুয়ে গুছিয়ে রাখুন।
  • বাথরুমের পরিবেশ ফ্রেশ রাখতে এর কর্নার বা জানালাতে গাছের পট ঝুলিয়ে দিন।
  • বারান্দার গাছগুলোর কথা ভুলে যাবেন না যেন। টবগুলোতে উৎসবের আমেজ দিতে নতুন রঙে রাঙিয়ে নিন। সম্ভব হলে স্ট্যান্ড কিনে টবগুলো সেখানে সাজিয়ে রাখতে পারেন এতে বারান্দাটাও নবরূপ পাবে বারান্দা একটু বড় বলে দোলনা রাখতে পারেন। 

ও আচ্ছা, আপনার গৃহদ্বারের পাশের দেয়ালে টাঙিয়ে দিন কোন টেরাকোটা চিত্র বা দারুণ ফ্রেমের কোন আয়না। সিঁড়ির পাশে জায়গা কিছুটা বেশি থাকলে সাময়িকভাবে অর্কিডের বাস্কেট রাখলেও মন্দ কী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //