যা ঘটেছিলো রাইসির হেলিকপ্টারে

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে রবিবার (১৯ মে) মারা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ মোট আটজন। তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কি ঠিক ঘটেছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত খুব একটা কমই জানা যাইনি। তবে এ ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে মুখ খুলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। ঘটনার দিন বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটির পাশেই অপর একটি হেলিকপ্টারে ছিলেন তিনি।

ঘটনার দিন শেষ মুহূর্তে আসলে কি ঘটেছিল, তা নিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার সঙ্গে কথা বলেছেন এই কর্মকর্তা। রবিবার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান প্রেসিডেন্ট রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। উদ্বোধনের পর সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা। কিন্তু পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। আর অন্য দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।

এ ঘটনা নিয়ে ইরনাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইসমাইলি জানান, ১৯ মে স্থানীয় সময় বেলা একটার দিকে হেলিকপ্টার তিনটি যাত্রা শুরু করে। তখন আবহাওয়া চমৎকার ও স্বাভাবিকই ছিলো। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি মাঝখানে ছিলো। সামনে একটি ও পেছনে অপর হেলিকপ্টারটি ছিলো। আর পুরো বহরের দায়িত্বভার ছিলো প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাইলটের ওপর।

ইসমাইলি জানান, যাত্রা শুরুর ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুইটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে আরও উঁচুতে উঠে ভ্রমণ করার নির্দেশ দেন। মূলত তিনি কাছাকাছি থাকা ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ওই সময় হঠাৎ রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উধাও হয়ে যায়। ঘন মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর আমাদের পাইলট প্রথম খেয়াল করেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দেখা যাচ্ছে না। এরপর আমাদের পাইলট বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকেন। হেলিকপ্টারটি খুঁজতে থাকেন।

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার রেডিও ডিভাইসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। পরে নিজেদের হেলিকপ্টার দুইটির উচ্চতা কমিয়ে পাশের একটি তামার খনিতে অবতরণ করা হয় বলেও জানান ইসমাইলি।

ইসমাইলি আরও বলেন, ওই সময় ‘অদৃশ্য হয়ে যাওয়া’ হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোল্লাহিয়ান ও প্রেসিডেন্ট রাইসির নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধানকে বারবার কল করা হয়। কিন্তু তাদের কারোরই সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্য দুইটি হেলিকপ্টারের পাইলটরা প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভিকেও কল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, জটিল ওই পরিস্থিতিতে শুধু রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তার (আল-হাশেম) অবস্থা ভালো ছিলো না। তিনি শুধু জানান, একটি উপত্যকায় তাদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে ইসমাইলি আরেকবার আল-হাশেমকে কল করতে সক্ষম হন। তখনও একই কথা জানান। মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির মুখপাত্র।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাই, সেখানে সবার মরদেহ দেখি। বুঝতে পারি, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ অন্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ হয়েছেন। তবে একমাত্র আলে-হাশেম হয়তো ঘণ্টাখানেক বেঁচে ছিলেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //