নুরের বাসায় তল্লাশির বিষয়ে যা বললেন ডিবি হারুন

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বাসায় মধ্যরাতে দরজা ভেঙে কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আজ বুধবার (২ আগস্ট) ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পুলিশ তার পরিচয় দিয়েছিল। আমরা তো আইনের বাইরে কিছু করিনি।

ডিবি হারুন আরো বলেন, বিন ইয়ামিন মোল্লা একটি মামলার আসামি। এছাড়াও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। তার বিভিন্ন ভিডিও রয়েছে আপনারা দেখতে পারবেন।

তিনি বলেন, ভিপি নুর, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, একজন রাজনীতিবিদ। তারই তো উচিত ছিল বাসায় যদি কোন মামলার আসামি থাকে তবে তাকে বের করে দেওয়া। সেটা না করে তিনি উল্টা পুলিশের উপর চড়াও হলেন, আবার পুলিশকে গালাগাল করলেন। সরকারি কাজে বাধা দান করলেন।

আইনের ধারা উল্লেখ করে ডিবি হারুন বলেন, আমাদের আইনেই বলা আছে মামলার আসামি যেখানে যার বাসায় থাকুক আমরা তাকে ধরে নিয়ে আসতে পারি। এর জন্যে যদি আমাদের বল প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় তবে সেটাও আমরা করতে পারবো। আমরা আইনের বাইরে কিছুই করিনি।

এর আগে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) মধ্যরাত ২টার দিকে নুরের বাসার দরজা ভেঙে কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসেন নুর। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যারা অভিযানে এসেছিলেন তাদের মাঝে একজন মদ্যপ অবস্থায় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। আমার দুই মাস ও সাড়ে তিন বছরের ছোটো দুটো বাচ্চা পুলিশের এ তাণ্ডবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।

পরে আবার রাত ৩টা ৪৪ মিনিটে ফের ফেসবুক লাইভে এসে নুর বলেন, আমি সিসিটিভিতে রাত ২টার দিকে দেখি নিচে আমার গাড়ির কাছে বেশ কয়েকজন লোক ঘোরাঘুরি করছে। পরে তারা লিফটে উঠে আমার বাসার দরজায় কলিংবেল বাজাতে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করায় জানায় তারা ডিবির লোক।

তিনি বলেন, এত রাতে ডিবির ইউনিফর্ম ছাড়া কোন লোককে আমি ঘরে ঢুকতে দিবো না জানালে, তারা বলেন দরজা না খুললে ভেঙে ফেলবে। পরে ৩টা দরজা ভেঙে আমার বাসায় ঢুকে পরে। ঢুকেই তারা জানায় আমার বাসায় নাকি জঙ্গি আছে। আমি জিজ্ঞেস করায় তারা কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে দেখায়। 

লাইভে নুর আরো বলেন, রাতে আমার বাসায় মতিঝিল জোনের ডিবির ডিসি পরিচয়ে যিনি এসেছিলেন তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তার চোখ লাল ছিল এবং অ্যালকোহলের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। আমি তাদের বললাম যে, ইয়ামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেই সঙ্গে সে কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি। সে যদি জঙ্গি হয় তবে আমিও তার নেতা, আমাকেও আপনারা নিয়ে যান। তারা কোন কথা না শুনে ইয়ামিনকে চিলের মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে চলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর। 

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্ররা যখন সরকার পতন আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ তখনই প্রশাসন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমাদের জঙ্গি, জামাত শিবির বানিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে এসব হুমকি।

নুর জানান, বুয়েটের ২৪ জন ছাত্র গ্রেপ্তারের ঘটনায় আজ বিকেলে আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। তাই আন্দোলনকে প্রভাবিত করতেই এত রাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে গেছেন তারা।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে রাত ১০টার দিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানকে সাদা পোশাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। রাত ৮টায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার বাবা রফিকুল মোল্লাকেও তুলে নিয়ে যায়। তবে ভোরে দুজনকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়া মধ্য রাতে এই ধরনের অভিযান আইন পরিপন্থী। আমরা মনে করি চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅধিকার পরিষদকে দূরে রাখতেই মূলত সরকার নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //