এমপি আজীম হত্যা: ঢাকায় আসছে ভারতীয় পুলিশের স্পেশাল টিম

ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য ঢাকায় আসছে ভারত পুলিশের একটি স্পেশাল টিম। 

ডিবি সূত্রে জানা যায়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের  হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। এসব তথ্য দুই দেশের পুলিশের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।  ভারতীয় পুলিশের একটি স্পেশাল টিম তদন্তের জন্য আজ ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তবে কত সদস্যের দল ঢাকায় আসবে তা এখনো জানা যায়নি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ভারতীয় পুলিশের এই বিশেষ টিমের ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি সূত্র।

এর আগে, বুধবার (২২ মে) সকালে গণমাধ্যম সূত্রে প্রথম খবর ছড়ায়, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার শিকার হয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে নিউটাউনের ওই ফ্লাটে আনারকে খুন করে লাশ টুকরো করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় নেওয়া হয় ১০ মিনিটেরও কম। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় অন্তত পাঁচজন। এরপর ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে খণ্ডিত অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। 

এছাড়া বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটের ফ্রিজে ও প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে মরদেহের কিছু টুকরো। প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত WB18 AA 5473 নম্বরের গাড়িটিও জব্দ করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গাড়িটিকে শনাক্ত করার পর মালিকসহ সেটি নিউটাউন থানায় আনা হয়। গাড়িটি থেকে ফরেনসিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাহীনের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে। আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে আমানকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

জানা যায়, কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজীমকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে আনেন। এরপর তাকে জিম্মি করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে ভরে ফেলা হয় অজ্ঞাত স্থানে। মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরোগুলো গুম করার জন্য সিয়াম ও জিহাদ নামের দুজনকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে দেখা করেন। তবে শাহীন পরবর্তীতে আমানকে কত টাকা দিয়েছেন সেটা জানা যায়নি।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। তারা হলেন- হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমান জানিয়েছে, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আমান। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //