উপকূলে অশ্রুভেজা লড়াকু জীবন

বাগেরহাটের মোংলার সুন্দরবন ও পশুর নদঘেঁষা চিলা ইউনিয়নের কেয়াবুনিয়া গ্রামের জেলে মজিবুর রহমানের জলেই কাটে জীবন। সেখানেই নিত্য জীবিকার যুদ্ধ। ডাঙায় বাঁধা নৌকা ভেসে গেছে জলোচ্ছ্বাসে। ৫০ হাজার টাকা সুদে ঋণ নিয়ে এবার মাছ ধরতে নেমেছিলেন মজিবুর। সব হারিয়ে ঋণ পরিশোধের চিন্তায় এখন দিশেহারা তিনি। যে সমুদ্র ঘিরে লেপ্টে জীবন, তারই উথালপাতাল থাবায় লণ্ডভণ্ড জীবিকা।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেশের প্রান্তিক জনপদের পরতে পরতে রেখে গেছে ভয়াল চিহ্ন; বাড়িতে বাড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ। কেউ হারিয়েছে ঘর। তলিয়ে গেছে কারও জাল, ভেসে গেছে নৌকা। স্বপ্নের ফসল গেছে ডুবে। ঋণ চুকিয়ে ক্ষতির খতিয়ান কতটা দীর্ঘ হবে, তা নিয়েই পেরেশান দরিদ্র মানুষ। তবুও জীবন থেমে থাকে না। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহেরও বেশি সময় কেটে গেছে, ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ আবার শুরু। 

এ রকমই এক লড়াকু জীবন মিজানুর রহমানের। খুলনার কয়রার সুখস্মৃতি আজও মনে পড়ে তার। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কাটা পড়ে সেই ছন্দময় জীবনের সুতো। নিঃস্ব হয়ে নতুনের খোঁজে মিজান থিতু হন মোংলার পশুর নদের পাড়ে। সোনাইতলা ইউনিয়নের জয়খাঁ গ্রাম মিজানের রূপান্তর ঠিকানা। ঠিকানা বদলের সঙ্গে ভাগ্যও দিয়েছে উড়াল! এখন ট্রলারে পর্যটক পারাপার করে যা রোজগার, তাতেই চলে সংসার। প্রতিদিন ভোরের আলো ডানা মেলতেই নিয়ম করে ট্রলার নিয়ে বের হন ঠিকই, তবে ঘূর্ণি-দুর্যোগের পর পর্যটকখরায় মিজান নিরাশ।

মিজানের মতো বাগেরহাটের মোংলার পশুর নদীর ঘাটে আরও জনাদশেক মাঝি পর্যটকের আশায় ট্রলার সাজিয়ে রেখেছেন। তবে সবার মুখে বিষাদের ছায়া। এর মধ্যে একজন রণজিত চন্দ্র দাশ। ঘূর্ণিঝড় রিমালে তার ঘর তছনছ। রণজিত একসময় থাকতেন পাইকগাছায়। ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নে চলে আসেন তিনি। রিমালের আঘাতের কথা মনে করে রণজিত বলেন, ‘সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। দুপুরে বৃষ্টি একটু বাড়ে, তখন নদীতে জোয়ার। পানির এত উচ্চতা, আর এ রকম দুই দিনের টানা ঝড় কোনোদিন দেখিনি। ঝড় তো প্রতিবার হয়। কয়েক দিন আগে থেকে জানি, এবারও ঝড় আসছে। দু-এক বছর ধরে ঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। এবার সে সুযোগ পাইনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //