ইবির ২ ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই ছাত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে অপর এক ছাত্রী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। গত ১৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় ডাবল ডেকার বাসে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর বিচার চেয়ে ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী আসমা আরা ও সাদিয়া তাসনিম বিপাশা। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের নওরীন নুসরাতের মদদে আব্দুল্লাহ আল ফাহমি (সিয়াম) ও তাদের দল এ ঘটনা ঘটায় বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে কথা-কাটাকাটির বিষয়ে স্বীকার করলেও শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা। 

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ছাত্রী, তাদের সহপাঠী ও তাদের পরিচিত কয়েকজন গত ১৯ জুন (সোমবার) কুষ্টিয়া শহর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বাসে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। এ সময় বাসের উপরতলায় একজন বহিরাগত লোক উঠলে কিছুক্ষণ পরে হেলপার তাকে নামতে বললেও তিনি নামতে চান না। তখন বাসের মধ্যে থাকা এক জুনিয়রও হেলপারকে ওই লোককে নামিয়ে দিতে বলেন। তখন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জিয়ন সরকার ওই ছেলের কলার চেপে ধরে এবং তার সাথে ঝামেলায় জড়ায়। তখন ভুক্তভোগী আসমা আরা বলেন, আপনারা ঝামেলা করছেন কেন? ক্যাম্পাস বাসে তো বাইরের লোক উঠার নিয়ম নেই। 

তখন নওরীন নুসরাত বলেণ, মানবিক দিক থেকে তো উনাকে নিতে পারি। আসমা আরা বলেন, হ্যাঁ মানবিক দিক থেকে আজ নাও, কাল দেখবে অন্য একজন এসে একই কথা বলছে। তখন জিয়ন সরকার ভুক্তভোগী আসমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মেয়ে আপনার নাম কী? সেশন কত? আমি কে, আমাকে চেনেন? আপনার সাহস হয় কী করে আমার কথার মধ্যে কথা বলার। এরপর ক্যাম্পাস গেটে বাস এলে হঠাৎ করে বাস থামিয়ে দিয়ে নওরীন এসে ভুক্তভোগীকে বলে ‘জিয়নের পুরুষ ইগো হার্ট হয়েছে ও এখন আপনাদের সাথে ঝামেলা করবে। আপনারা কি পারবেন নিজেদের সেইফ করতে।’ তখন আসমা আরা বলেন, জিয়ন ঝামেলা করবে আর তুমি প্রকাশ্য সেটা আমাকে বলতে এসেছ? এত সাহস কোথা থেকে পাও? নওরিন বলেন, যার সাহস আছে সে তো সাহস দেখাবেই।

এর মধ্যেই জিয়ন নিচে গিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সিয়ামসহ কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসেন। বাসে উঠে সিয়াম অশ্লীল ভাষায় অনবরত গালি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সিয়াম ও নওরীন ভুক্তভোগীর হাত ধরে টানাটানি করে রাত ৯টার বাস থেকে নামানোর চেষ্টা করেন। এই পরিস্থিতি দেখে আসমার বান্ধবী সাদিয়া তাসনীম বিপাশা ব্যাগ থেকে ফোন বের করলে জিয়ন থাবা মেরে ফোন কেড়ে নেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওরীন নুসরাতের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল ফাহমি (সিয়াম) বলেন, ওখানে আপুর (নওরীন নুসরাত) সাথে তাদের সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়। পরে আমরা বিষয়টি জানতে চাইলে আপুরা (ভুক্তভোগী) সিনিয়র হয়েও আমাদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, উল্টো তারাই আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন।

অপর অভিযুক্ত জিয়ন সরকার বলেন, ওইদিন একটা বাইরের লোক বাসে উঠলে তাকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তখন আমরা তাদের কাছে শুনি, উনাকে কেন নামিয়ে দিচ্ছেন? সেখানে কথা-কাটাকাটি বা হাতাহাতি কোনো কিছুই হয়নি। 

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, অভিযোগ দেওয়ার ব্যাপারে এক ছাত্রী আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, এখন যেহেতু অফিস ছুটি অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিতে পারব না। সেহেতু তাকে ছুটির পরে সরাসরি অফিসে এসে অভিযোগ দিতে বলেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //