দক্ষিণ আফ্রিকা: চিরকালীন এক আক্ষেপের নাম

বিশ্ব ক্রিকেটে দুর্ভাগা এক দলের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। সেরা দলের সম্ভাবনা কখনোই কাজে লাগাতে পারেনি দেশটি। সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপেও পারেনি। পুরো আসরে ভালো খেলে সেমিফাইনালে আটকে গেছে টেম্বা বাভুমার দল। এবার কোনো দুর্ভাগ্য নিয়ে নয়, স্বাভাবিক খেলা খেলেই হেরে গেছে দলটি। তবে বছরের শুরুতে তাদের ছিল না সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা। শঙ্কার মধ্যে সাদা বলে দলের দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয় রব ওয়াল্টারের হাতে। একই সময় টেস্ট দলের কোচ করা হয় মুকরি কোনডারকে। 

কিন্তু ১০ মাসের ব্যবধানে সেই দলটি বিশ্বকাপের শেষ চারে খেলল গ্রুপে দ্বিতীয় সেরা দলের তকমা নিয়ে। কিন্তু দৌড় থেমে যায় ফাইনালে ওঠার আগেই। ২১৩ রানের মামুলি টার্গেট দিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছে প্রোটিয়ারা। হেক্সা মিশনে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে জিততে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। প্যাট কামিন্সের দলের জয়টাও আসে মাত্র ৩ উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বৈশ্বিক আসরে সেরা সাফল্য অবশ্য ১৯৯৮ সালের মিনি বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ওই আসরে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের হাতেই উঠেছিল শিরোপা। সেটাই শেষ। তবে এবারের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে কোনোভাবেই চোকার্স শব্দটি জুড়ে দেওয়া যায় না। জয়ের ম্যাচ তো হারেনি, হার দেখেছে পরাজিত হবে এমন ম্যাচেই। 

যদিও এখনো ক্রিকেটপ্রেমীরা ভুলতে পারে না ১৯৯২ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের দুই সেমিফাইনালের কথা। ৩২ বছর আগে প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে এক পর্যায়ে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রানের। হঠাৎই বৃষ্টির বাগড়ায় পড়ে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ বলে ২২ রান। ডাকওয়ার্থ-লুইসের বড় শিকার দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে যায় ১৯ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা ভাবতে পারেনি যে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে তাদের দুর্ভাগ্যের যাত্রাও শুরু হবে ইংল্যান্ড থেকে। এই সেমিফাইনালটি শুধু একটি দলের জন্য কলঙ্ক নয়, সেটি পুরো ক্রিকেট বিশ্বের জন্য কলঙ্ক। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। ২১৩ রানের ছোট স্কোর তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। বিশেষ করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ল্যান্স ক্লুজনারের সঙ্গে ‘অকল্পনীয়’ ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান এলান ডোনাল্ড। জয়ের খুব কাছে গিয়ে ম্যাচটি টাই হয়ে যায়। সে কারণেই অনেকেই বলে থাকেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচে ঠিক ‘চোক’ করেনি, বরং আটকে যায় দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে। 

বর্ণবাদী আচরণের কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের খেলা হয়নি ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৮৭-এর বিশ্বকাপে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৯৯২ ফিরে সেই আসরেই শেষ চারে ওঠে প্রোটিয়ারা। এরপর আরও তিন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা। তবে কোনো বারই আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব দক্ষিণের এই দেশের ফাইনালে খেলার সৌভাগ্য হয়নি। তাই তাদের ব্যর্থদের দল অর্থাৎ চোকার্স বলে ব্যঙ্গ করা হয়। দুই যুগ আগে অস্ট্রেলিয়ার সমান ২১৩ রান করলেও সুপার সিক্সে নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে বাদ পড়ার কষ্টে পুড়তে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যদিও ২০০৩ নিজ মাঠে তারা নক আউটেই উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে ভুল রান তাড়ার হিসাব করে। ২০০৭ সালে ফের সেমিতে হেরে যায় তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ২০১৫ সালেও সেমিফাইনালে ডিএল মেথডে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বাদ পড়ে দেশটি। এবার তেমন কিছু না হলে হতাশা আর আক্ষেপের পুরনো গল্পই রচিত হয়েছে। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আপাতত অপেক্ষা চার বছরের, ২০২৭ বিশ্বকাপ যে বসছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //