শাহ আবদুল করিমের জন্মদিন পালন

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে তার নিজ গ্রাম উজান ধলে পালিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজান ধল গ্রামে তার স্ত্রী সরলা ও আব্দুল করিমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে আব্দুল করিমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিনের কেক কাটেন তার ভক্ত ও অতিথিরা। কেক কাটা শেষ আব্দুল করিমের জীবন দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালালের সভাপতিত্বে ও সংস্কৃতি কর্মী আপেল মাহমুদ ও জয়ন্ত কুমার সরকারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমির বিশ্বাস, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা পাল, দিরাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুল হালিম, ইউআরসি নজরুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সহ সভাপতি সোয়েব হাসান প্রমুখ।

সন্ধ্যায় শুরু হয় করিম গীতির আসর, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে জেলা শহরে কোনো অনুষ্ঠান না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার ভক্তরা।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ২ ফাল্গুন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে এক কৃষক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান।

শাহ আবদুল করিমের ছেলেবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্য আর দুঃখ-কষ্টের মধ্যে। ফলে কোনো স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাননি তিনি। ১৫ বছর বয়সে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে যে নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, সেটিও বন্ধ হয়ে যায় তার ভর্তির আটদিনের মাথায়। অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হবেন সে সুযোগও হয়নি।

তবে তিনি ছোটবেলাতেই গানের তালিম নিতে ভুল করেননি। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন কমর উদ্দিন, সাধক বশির উদ্দিন ও শাহ ইব্রাহিম মোস্তান। এ বাউল শিল্পী তার ৯৩ বছরের জীবনে দেড় হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন; করেছেন সুরারোপ।

শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’, ‘কোন মেস্তুরি নাও বানাইলো’, ‘গাড়ি চলে না চলে না’, ‘আমি কুল হারা কলঙ্কিনী’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘আমি এই মিনতি করিরে’, ‘রঙের দুনিয়া আর চাই না’, ‘সখি কুঞ্জ সাজাও গো’, ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন থেকে শুরু, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও সর্বশেষ ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বাঙালিদের দাবি আদায়ের প্রতিটি সংগ্রামে তার রচিত গান দেশের মানুষকে আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছে।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //