পালিয়ে বিয়ে করলেন সেই বর-কনে

চুয়াডাঙ্গায় বিয়ে বাড়িতে মাংস বেশি খাওয়া নিয়ে বিতণ্ডার জেরে যে দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল, সেই বর-কনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পালিয়ে নিজেরা আবার বিয়ে করেছেন।

এ বিষয়ে বর সবুজ আলী বলেন, সেখানে যা ঘটেছে, তাতে আমাদের দুইজনের তো কোনও অন্যায় নেই। বিয়ে বাড়িতে এক-দুই কথা হয়। কিন্তু সেটা যে এতদূর চলে যাবে, তা ভাবি নাই।

এখন তারা উভয়েই ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন। সুমি খাতুনের সঙ্গে সৌদি আরব প্রবাসী সবুজ আলীর বিয়ে হয় দুই বছর আগে। সেই সময় তিনি সৌদি আরবে থাকলেও টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। গত রবিবার (২৪ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে বউ তুলে নিয়ে আসার কথা ছিল। সেই অনুষ্ঠানেই গণ্ডগোল হওয়ার কারণে তাদের তালাক হয়ে যায়।

বিয়ের সময় তার সঙ্গে মোবাইল ফোন ছিল না। এ কারণে সেই সময় তিনি কারও সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেন নাই।

দুই বছর আগে বিয়ে হলেও চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দশমী গ্রামে গত রবিবার কনে সুমি খাতুনকে তুলে দেয়ার অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে বরপক্ষের মাংস বেশি খাওয়া নিয়ে কনেপক্ষের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা, পরে সংঘর্ষ বাধে। এরপর সালিশ বৈঠকে বর-কনের মধ্যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

কনের পিতা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরপক্ষের লোকজন খাবারে অনেক মাংস নষ্ট করেছে। এরপরও ভাত না খেয়ে আরও মাংস চাইলে এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়ে যায়। এছাড়া তারা গায়ে হলুদের উপহারও ফেরত নিয়ে এসেছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। সেদিন রাতেই দুই পক্ষের সালিশে বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি বলেন, ‘তিনজন নিয়ে গ্যাঞ্জাম। সবাই খেয়ে উঠে গেছে, বরের সাথে তিনজন ছিল, ওই তিনজনকে নিয়ে গ্যাঞ্জাম। তারা বলতেছিল, আরও মাংস দেও। গ্যাঞ্জাম করে মারামারি করল।’

তবে বর সবুজ আলীর দাবি, ‘মাংস নিয়ে না, হাত ধোয়া নিয়ে কথাবার্তার জের ধরে ঘটনাটা ঘটেছে। তারপর কী থেকে কী হয়ে গেল, বুঝলাম না।’ আর যাদের কারণে ঝামেলা হয়েছে, তারা ঘনিষ্ঠ কোনও স্বজন নন বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সেই ঝামেলার পর যখন দুই পরিবারের মুরুব্বি, গ্রামের মাতবর মিলে বৈঠকে বসেন, সেই সময়েও তিনি চেয়েছেন যে, তার স্ত্রীকে তিনি বাড়িতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তার শ্বশুর রাজি হননি। তবে সেদিন রাতে তিনি ঘুমাতে পারেননি।

সবুজ আলী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ঝগড়ার সময় আমার কথা কেউ শোনেনি। আমি তখনি বলছিলাম, আমার বউকে আমি নিয়ে যাব। আমি বাড়িতে এসে রাগে বাসর ঘরের ফুল-টুল সব ছিঁড়ে ফেলছি। সারারাত ঘুমাতে পারি নাই, কান্নাকাটি করছি। পরের দিন সকালে মেঝ ভাবীর ফোনে আমার ওয়াইফ ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করতে শুরু করে। সে বলে আমি থাকব না, আমি চলে আসব। পরে আমরা গেলাম।

তিনি জানান, সন্ধ্যার সময় একটি মোটরসাইকেলে করে তারা মেয়েকে নিয়ে আসেন। তারপর একটি কাজী অফিসে তারা আবার বিয়ে করে স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সবুজ বলেন, আমি অনলাইনে, ফেসবুকে এরকম ঘটনার কথা শুনেছি, কিন্তু আমার জীবনেই যে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে, কখনো ভাবি নাই। এখন মেয়ের পক্ষেও সবাই ভালো আছে, আমরাও ভালো আছি।

বিদেশে থাকতেই মোবাইলের মাধ্যমে স্ত্রী সুমির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।

সবুজের মোবাইল দিয়েই কথা হয় কনে সুমির সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, সেদিন তার খুব খারাপ লাগছিল। সারারাত কান্নাকাটি করছিলেন। স্বজনরা তাকে বোঝাচ্ছিলেন যে, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছি। তার অভিমানও হয়েছিল, কিন্তু তিনি বারবার বলেছেন, আমি ওর (সবুজ আলী) কাছে যাব।

তিনি বলেন, ‘আমি সকালে হ্যালো কওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেও কানতে (কান্না করতে) শুরু করলো, আমিও কানতে শুরু করলাম। আমি কইলাম, আমি তোমার কাছে আজকেই চলে আসব।’

সন্ধ্যায় এক কাপড়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসেন বলে জানান। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও পালিয়ে আসার পর থেকে তার বাবার সঙ্গে আর কোনও কথা হয়নি বলে সুমি জানান।

সুমির বাবা নজরুল বলেন, সে চলে গেছে তার ভাগ্য নিয়ে, এখন আমি আর কি বলবো। সে বড়দের কথা শুনলো না। একদিন থেকে অবশ্য ভালোই হয়েছে। যার সাথে বিয়ে হয়েছিল, তার সাথেই আবার বিয়ে হইছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //