মহিষমারী চরে পুলিশের গুলিবর্ষণ, নারীসহ আহত ১৫

বরিশাল-ভোলার সীমান্তবর্তী মহিষমারী চরে দুই গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৮ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ। তখন গ্রামবাসী পাল্টা গুলি ছোঁড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। উভয় পক্ষের গুলিতে আটজন নারীসহ ১৫ জনের আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে নারীসহ ১২ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং ভোলার ভেদুরীয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মহিষাদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভোলা এবং বরিশাল জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌকিদার মাহেব হোসেন বলেন, ‘শ্রীপুরের রুবেল কাজী তার লোকজন নিয়ে ভোলার ভেদুরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এসময় তাদের সাথে বিভিন্ন অস্ত্র ছিলো। সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে থাকা বরিশাল ও ভোলা জেলা পুলিশের যৌথ পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের বাধা প্রদান করে। এক পর্যায় রুবেল কাজীর লোকেরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মোল্লা বলেন, ‘বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ এবং ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল এবং ভোলা অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে প্রায় দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনরায় হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শুনেছি রুবেল কাজীর লোকজন অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করে। এসময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। তবে এই ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, অভিযুক্ত রুবেল কাজী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি। অভিযোগ অস্বীকার করে রুবেল কাজী বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি মেহেন্দিগঞ্জে ছিলাম। বরিশালে অবস্থান করছিলাম। পূর্বেও বরিশাল-ভোলার সীমানা নিয়ে একাধিকবার হামলা সংঘর্ষ ঘটেছে। কিন্তু এবার গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রথম। পুলিশ বিনা উসকানিতে গ্রামবাসীর ওপর গুলি করেছে।

তিনি বলেন, ‘যেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে পুলিশ ক্যাম্পের দূরত্ব অন্তত দুই কিলোমিটার। ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মহিষমারী গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা এবং গুলিবর্ষণ করেছে। এতে আটজন নারীসহ মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদেরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা ভোলা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এনায়েত হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ সরদার স্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি এই বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলের সাথে কথা বলছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শ্রীপুর ও ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন শ্রীপুরের রুবেল কাজী। এতে বাধা দেয় ভেদুরিয়ার বাসিন্দা।

ওসি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় রুবেল কাজী স্থানীয় অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এসময় সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বরিশাল ও ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এসময় তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিলো। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা জমি দখলের জন্য অগ্রসর হয়। এক পর্যায় পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। যতটুকু জেনেছি তাতে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। তবে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। কতজন আহত হয়েছেন সে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //